বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

হায় ফুটবলের উন্নতি।

সালাহউদ্দিন যখন বাফুফের সভাপতি নির্বাচিত হলেন তখন তখন বাংলাদেশের সকল ক্রিড়াপ্রেমি জনসাধারনই দল-মত নির্বিশেষে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিল। কারন এর আগে সবসময় বাফুফের সভাপতি পদে যারা এসেছেন তারা সবাই ছিলেন নামমাত্র ক্রিড়া সংগঠক। রাজনৈতিক প্রভাব বজায় রাখা বা অন্যান্য স্বার্থে যারা ক্রিড়াঙ্গনের সাথে সামান্য সম্পর্ক বজায় রাখতেন। কিন্ত সালাউদ্দিন বাংলা দেশের ফুটবলের শ্রেষ্ঠ স্ট্রাইকার ছিলেন। খুব ছোটকালে দেখা তার খেলার বেশি কিছু মনে না থাকলেও জাতিয় দল এবং বিভিন্ন ক্লাবের কোচ হিসেবে তার সাফল্য আমারা দেখেছি। ক্রিড়াপ্রেমি বাংলাদেশের জনগন ভেবেছিল ফুটবলের সেই সুদিন আবার ফিরে আসবে। যখন আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ দেখার জন্য বেলা তিনটার মধ্যে দেশের সব শহরের রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যেত। এখন অনেকে হয়তোবা আবাহনির নীল-হলুদ এবং মোহামেডানের সাদা-কালো পতাকা চিনেননা। কিন্তু তখন প্রিমিয়ার লিগ চলা কালে এখন যেমন বিম্বকাপের সময় আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল এর পতাকা উড়ে সেরকম আবাহনী-মোহামেডানের পতাকা উড়ত মোড়ে মোড়ে। নব্বই এর দশক থেকে শুরু হয় আমাদের ফুটবলের অধোগতি। সালাউদ্দিন,কায়সার,আসলাম,সাব্বির,রুমি,আলফাজ দের উত্তরসূরি হিসেবে সেই মানের কোন ফুটবলার আর আসেনি। যদিও এর মধ্যেই ২০০৩ এর সাফ ফুটবলের মত কয়েকটি সাফল্য এসেছে। কিন্তু জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে ফুটবলের মান নেমে গেছ অনেক। ক্রিকেটের তুলনামুলক ভাল সাফল্য এবং ডিস এর কল্যানে আন্তর্জাতিক ফুটবল এর জনপ্রিয়তা আরো কমিয়ে দিয়েছে ফুটবলের জনপ্রিয়তা।
ফুটবলের এই পতন এর মধ্যেই আবার যুক্ত হয়েছে রাজনিতি এবং পাতানো খেলা। বাংলাদেশ লিগে সবসময় প্রিমিয়ার লিগের কয়েকটি দল এবং দেশের বিভাগিয় লিগগুলির সেরা দলগুলি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ২০০৭ সাল থেকে। প্রথম তিনটি লিগে চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাকা আবাহনী। এবার হটাত করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ঢাকার প্রথম বিভাগ লিগ থেকে একটি দল কে সুযোগ দেয়ার। প্রায় ৪০ বছরের কাছাকাছি দেশের ক্রিড়াঙ্গনে মধ্যম সারির ক্লাব বলে পরিচিত ধানমন্ডি ক্লাব হঠাত করেই তার নাম পরিবর্তন করে হয়ে যায় "শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব"। আর এই নামের বদেীলতে রানারআপ হয়েও বাংলাদেশ লিগে খেলার যোগ্যতা অর্যন করে তারা। শেষ পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগ এবং আঞ্চলিক লিগের দলগুলিকে পরাজিত করে প্রথমবার খেলেই প্রফেশনাল লিগ চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করে তারা। কিন্তু এই লিগে তাদের কোয়ালিফাই করা যেমন প্রশ্নবিদ্ধ তেনমি তার চ্যাম্পিয়নশিপও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে পাতানো খেলার অভিযোগে। বিশেষ করে রহমতগঞ্জ এর সাথে তাদের খেলাটি পাতানোর অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। রহমতগঞ্জ এদেশের ফুটবলের পরিচিত নাম। প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন না হলেও কয়েকবারই তৃত্বিয়-চতুর্থ স্থানে ছিল রহমতগঞ্জ। কিন্তু এভাবে তার একটি নতুন দলের কাছে সন্মান বিসর্জন ধেয়ার পিছনে কি ছিল? শুধুই টাকা, না তার সাথে আরো কিছু। এবারের বাংলাদেশ লিগের কয়েকটি খেলাই পাতানোর অভিযোগ থাকলেও অন্য দলগুলির চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত তদন্ত কমিটি গঠিত হয় শুধু রহমতগঞ্জ-শেখ জামাল্ ম্যাচটির জন্য। আজকে সেই কমিটি রিপোর্ট দিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে ম্যাচটি সমঝোতার মাধ্যমে হয়েছে এবং এর জন্য ক্লাব দ্বয় এবং সংশ্লিষ্ট খেলোয়ারদের জরিমানার সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু ম্যাচ পাতানো আর সমঝোতার মধ্যে পার্থক্য কোথায়? বাংলাদেশ লিগের বাইলজ অনুযায়ি কোন দলের বিপক্ষে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ প্রমানিত হলে তার স্থান অবনমনের বিধান আছে। কি কারনে তদন্ত রিপোর্টে কথার মারপ্যচে উদ্ধার পেয়ে যাচ্ছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব? দেশের ফুটবলে পাতানো খেলা নতুন কিছু না হলেও এই ভাবে মানুষের চোখে ধুলো দেয়ার চেষ্টার কারন কি? শুধু নাম আর পিছনের শক্তির দাপটেই কি প্রথম বার খেলতে নেমেই তার থেকে র্যাংকিং এ এগিয়ে থাকা নয়টি দলকে অতিক্রম করে বাংলাদেশ লিগ চ্যাম্পিয়ন হলো এই ক্লাবটি। আর যদি ক্লাব দ্বয় কোন অপরাধ না করেই থাকে তাহলে জরিমানার সুপারিশ কেন?
ফুটবল নিয়ে দেশের ক্রিড়াপ্রেমি জনগন যে সপ্ন আবার দেখছিল তা কি স্রেফ কিছু সুযোগ সন্ধানির জন্য ভেষ্তে যাবে। তাহলে কি সেই সুযোগ সন্ধানিরা যার নাম ব্যানার হিসেবে ব্যবহার করছে তার নামের মুল্য এদেশের ফুটবলের ভবিষ্যতের থেকে বেশি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন