বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

আরবী মাস ও তারিখ নিয়ে জটিলতা। আজকে দশই মুহররম ঠিক।

আরবী মাস অনুযায়ি ইসলাম এর অনুসারিরা তাদের ইবাদত ও উৎসব পালন করে থাকেন। আরবী সাল গননা পদ্ধতিতে মাস একটি চান্দ্র মাস। অর্থাত চাঁেদর আবর্তনের উপর নির্ভর করে এই মাস এর প্রথম ও শেষ দিন নির্ধারন করা হয়। বিভিন্ন আলেম দের কাছ থেকে যতটুক যেনেছি। হাদিসে রমজানের রোজা সম্পর্কে বলা হয়ে চাঁদ দেখে রাখতে এবং চাঁদ দেখে রোজা ছাড়তে। আর্থাত চাক্ষুস চাঁদ দেখার উপর রমজান মাস নির্ভরশিল। কিন্তু শুধু রমজান মাস নয় অন্য মাস গননার ক্ষেত্রেও এই গ্রহনযোগ্য একাধিক মুসলিম ব্যাক্তির চাঁদ দেখার সাক্ষের উপর নির্ভর করে আরবী মাস নির্দারন করা হয়। আরবী বছর গননা করা হয় সাধারনত ৩৫৫-৩৫৬ দিনে। ঋতুর উপর এই সাল নির্ভরশিল নয়। আরবী মাসগুলি চাঁদের আবর্তনের উপর নির্ভর করে ২৯ বা ত্রিশ দিনে হয়। চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নাই। সুর্যের আলো চাঁদের যে উপর পরে তাই পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান হয়। যখন সুর্যেল আলো সম্পুর্ন চাঁদকে দৃশ্যমান করে তখনই পুর্ন চাঁদ দৃশ্যমান হয় যাকে আমরা পুর্নিমা বলি। পুর্নিমার পর থেকে চাঁদ আকারে ছোট হতে থাকে এবং অমবস্যার রাতে চাঁদ একদমই দেখা যায়না। এই অমাবস্যার পরে যে ছোট্য কাস্তে আকৃতির চাঁদ দেখা যায় তাকেই নতুন চাঁদ বলা হয় এবং আরবী মাসের প্রথম তারিখ গননা করা হয় সেই চাঁদ দেখা যাওয়ার রাত থেকে। দুটি পুর্নিমার মধ্যে মোটামুটি ২৯ দিন বারো ঘন্টা ৪৪ মিনিট এর ব্যবধান থাকে। এখন পৃথিবী,চাঁদ এবং সূর্য সবকিছূই তার জন্য নির্দিস্ট কক্ষপথে আবর্তন করে চলছে। পৃথিবী তার আবর্তনের জন্য এর অর্ধাংশে দিন ও অপরঅর্ধে রাত থাকে। সুর্যের আলোর প্রখরতা ও অন্যান্য কারনে দিনের বেলা চাঁদ খুব কমই দৃশ্যমান হয়। নতুন চাঁদ গননা করা হয় কেবল মাত্র সুর্যাস্তের পর। এখন পৃথিবীথেকে চাঁদ ও সুর্যের দুরুত্ব ও অবস্থানের ভিন্নতার কারনে এবং দিবারাত্রির প্রভাবে পৃথিবীর সকল স্থান থেকে একই সময়ে নতুন চাঁদ দৃশ্যমান হয়না। যে কারনে সাধারনত আমাদের দেশের রমজান এবং ঈদ মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পরে উদযাপিত হয়। কিন্তু এরকম সবসময় হওয়া বাধ্যতামুলক নয়। যেহেতু এটি চাঁদ নির্ভরযোগ্য ব্রক্তির সচক্ষে দেখার উপরই নির্ভরশিল। চাঁদের আবর্তন সময় হচ্ছে প্রায় সাড়ে উনত্রিশ দিন। সুতারং উনত্রিশতম রাত্রেও ানেক যায়গায় চাঁদ দৃশ্যমান হয়্। আবার পৃথিবীর অনেক জায়গায় নতুন চাঁদ দৃশ্যমান হয় আগের মাসের তিরিশতম সন্ধায়।
এখন এবছর দেখা যাচ্ছে সৈীদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্য এবং আমাদের দেশে একই দিনে মুহররম মাস শুরু হয়েছে। এবং সেই ধারাবাহিকতায় ১০ই মুহররম আশূরা একই দিনে পালিত হচ্ছে। উভয় দেশের সরকারী চাঁদ দেখার জন্য নির্ধারিত পরিষদ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেকে বলছেন এটি সম্ভব নয় এবং বাংলাদেশে মুহররম আগামীকাল ৭ই ডিসেম্বর পালন করতে হবে। আমি মনে করছি এই দাবি অত্যন্ত অযেীক্তিক। গত নয়দিন বাংলাদেশের কোন উল্লেখযোগ্য আলেম এই বিষয় নিয়ে কোন বক্তব্য রাখেননি। অন্যদিকে সেীদি আরবে সম্ভবত দুই দিন পর সিদ্ধানত নেয়া হয় যে মুহররম মাস ইংরেজি ২৭শে নভেম্বর এর দিন এবং এর পুর্বরাত ২৬ শে নভেম্বর থেকৈ গননা করা হবে। ২৫ শে নভেম্বর এর রাতে নির্ভরযোগ্য চাঁদ দেখার সংবাদ না পাওয়ায় তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উভয় দেশের চাঁদ দেখ কমিটিই কোন ভুল করেছে বলে মনে হয়না। ইউএস নেীবাহিনীর পরিচালিত নিন্মের ওয়েবসাইটে পৃথিবীর সকল ষ্থান থেকে চাঁদ ও সুর্যের অবস্থান সংক্রান্ত সম্ভাব্য তথ্য ও উপাত্ত পাওয়া যায়।
http://aa.usno.navy.mil/data/docs/RS_OneDay.php

এই সাইটের তথ্য অনুসারে পবিত্র মক্কা নগরীর অক্ষাংশ ২১ ডিগ্রি ২৫ মিনিট এবং দ্রাঘিমা ৩৯ ডিগ্রি ৪৮ মিনিট এর ২৫ এ নভেম্বর রাতে চাঁদ ও সুর্যের সম্ভাব্য সময়গুলি হচ্ছে।
(longitude E39.8, latitude N21.4):
Friday 25 November 2011 Universal Time +3h

SUN
Begin civil twilight 06:14
Sunrise 06:38
Sun transit 12:08
Sunset 17:37
End civil twilight 18:01

MOON
Moonset 16:52 on preceding day
Moonrise 06:37
Moon transit 12:14
Moonset 17:51
Moonrise 07:41 on following day
New Moon on 25 November 2011 at 09:10

অর্থাত এই দিন সুর্যাষ্ত হবে সন্ধা পাঁচটা সাইত্রিশ মিনিটে অন্যদিকে চাঁদ দেখা যাবে পাঁচটা একান্ন মিনিট পর্যন্ত। অর্থান সুর্যষ্তের পর মাত্র বার মিনিট চাঁদ দৃশ্যমান থাকবে। এই সময়ের মধ্যে চাঁদের অতি ক্ষুদ্র যে অংশ দেখা যাবে তা খালি চোখে না দেখার সম্ভাবনা প্রবল। সুতারাং সৈীদি কর্তৃপক্ষ এই দিন চাঁদ দেখা না যাওয়া স্বাভাবিক ভাবেই পরেরদিন দিবাগত রাত অর্থাত ২৬ শে নভেম্বর থেকে মুহররম মাস গননা করছে। সৈীদি আরবের অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যেও সর্বোচ্চ দশ মিনিটের ব্যবধান থাকায় অন্যান্য অঞ্ছলেও চাঁদ দেখা না যেতে পারে। কারন মক্কা নগরী সেীদি আরবের পশ্চিম দিকে অবস্থিত এবং এর পুর্বের অঞ্চলে আরো আগে সুর্যাস্ত হয়।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারের চাঁদ দেখা কমিটি ২৬শে নভেম্বর দিবাগত রাত থেকে ১লা মুহররম গননা শুরু করেন যার কারনে আজকে ৬ই ডিসেম্বর ১০ই মুহররম আশুরার দিন হিসেবে পালিত হচ্ছে। একই ওয়েবসাইট এর তথ্য অনুসারে ঢাকার অক্ষ ও দ্রাঘিমাতে সম্ভাব্য সময়।

(longitude E90.4, latitude N23.7):
Saturday 26 November 2011 Universal Time + 6h

SUN
Begin civil twilight 05:56
Sunrise 06:20
Sun transit 11:46
Sunset 17:11
End civil twilight 17:35

MOON
Moonset 17:15 on preceding day
Moonrise 07:15
Moon transit 12:46
Moonset 18:17
Moonrise 08:15 on following day

Phase of the Moon on 26 November: waxing crescent with 1% of the Moon's visible disk illuminated.
এই উপাত্ত অনুসারে ২৬ শে নভেম্বর রাতে ঢাকায় সুর্যাস্ত হবে পাঁচটা এগারো মিনিটে এবং চাঁদ দেখা যাবে ছয়টা সতের পর্যন্ত। অর্থাত প্রায় একঘন্টা সময় চাঁদ দৃশ্যমান থাকবে এবং পুর্নিমার সময় যে পুর্ন চন্দ্র দেখা যায় তার এক শতাংশ আকৃতির চাঁদ দেখা যাবে। এই টুক আকৃতির চাঁদ দেখার জন্য এক ঘন্টা যথেষ্ট সময়। সুতারাং ২৬শে নভেম্বর দিবাগত রাত থেকে মুহররম মাস গননায় কর্তৃপক্ষ কোন ভূল করেছেন বলে মনে হয়না।

গত নয়দিন ধরে এই দিনটি নির্ধারিত থাকলেও কোন উল্লেখযোগ্য আলেম বা সংগঠন এর বিরোধিতা করেছেন বলে আমার জানা নাই। কেন্ জানি ব্লগে গত দু্ই একদিন ধরে অনেকে মত প্রকাশ করছেন যে যেহেতু সেীদি আরবে আজকে দশই মুহররম পালন করা হচ্ছে সেহেতু আমাদের দেশে আগামীকাল ১০ই মুহররম ধরা উচিত। এই দাবির পক্ষে কোন যুক্তি আমার নজরে আসছেনা। এরা অনেকটা তাদের মতই আচরন করছেন যারা প্রতি বছরই বাংলাদেশের কয়েকটি স্থানে সেীদি আরবের সাথে মিলিয়ে রোজা ঈদ পালন করা হয়। চাঁদ দেখা গেছে কি যায়নি তা বিবেচনা করা হয়না। অন্যদিকে কালকে বাংলাদেশে ১০ই মুহররম নির্ধারনের জন্য যারা দাবি করছেন তারাও অনেকটা সেভাবেই সেীদি আরবের একদিন পর এখানে চাঁদ দেখা যাওয়াটা বাধ্যতমুলক বলে মনে করছেন। যেহেতু নিজের দেশে চাঁদ দেখার উপরই আরবী তারিখ নির্ধারিত হয় সুতারাং আমাদের দেশে যেহেতু তথ্য ও উপাত্ত অনুসারে ২৬শে নভেম্বর সন্ধায় দির্ঘ সময় ধরে নতুন চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভবনা আছে সুতারাং কর্তৃপক্ষ নিশ্চই নির্ভরযোগ্য ব্যাক্তির চাক্ষুস সাক্ষের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত নয়দিন যেহেতু কোন উল্লেখযোগ্য আলেম এর প্রতিবাদ করেননি সুতারাং একে ভুল বলে মনে করার কোন কারন দেখছিনা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন