সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২

বাংলা চলচ্চিত্রের অর্ধ শতাব্দীর অবসান

বিশিষ্ট অভিনেতা সাইফুদ্দিন আহমদ সোমবার বেলা তিনটায় সিএমএইচ এ ইন্তেকাল করেছেন(ইন্নাইলাইহে ওইন্নাইলাইহে রাজেউন)। তার ইন্তেকালের সাথে সাথে সমািপ্ত হলো বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের একটি যুগ নয় বরং অর্ধ শতাব্দির। ১৯৫৬ সালে বাংলাদেশে নির্মিত প্রথম ছায়াছবি মুখ ও মুখোশ এ অভিনয়ের মাধ্যমে কেীতুক অভিনেতা হিসেবে তার যাত্রা শুরু। ছবিটিতে তিনি কমেডিয়ান বা কেীতুক অভিনেতা হিসেবে চাকরের ভুমিকায় অভিনয় করেন। তার বিপরিতে অভিনেত্রি ছিলেন বিলকিস বারি। সেই থেকে শুরু করে প্রায় অর্ধ শতাব্দি সময় সিনেমা,টেলিভিশন,মঞ্চ এবং রেডিওতে দাপটের সাথে অভিনয় করে কাটিয়েছেন। বয়স এবং বর্তমান সিনেমার পরিবেশের কারনে সিনেমায় অভিনয় ছেড়ে দিলেও শেষ দিকে টেলিভিশন নাটকে এবং ইত্যাদি অনুষ্ঠানের বিভিন্ন কেীতুক স্কিটএ অভিনয় করতেন। ইত্যাদির প্রথম দিকের মিঠু ও তার করা দাদা নাতির আইটেম টি ছিল নিয়মিত। টেলিভিশন বা সিনেমায় সকল প্রজন্মের দর্শকের কাছে প্রিয় ও পরিচিত মুখ ছিলেন সাইফুদ্দিন।

আসাম প্রদেশের ধুবড়িতে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম সাইফুদ্দিন আহমদের। পিতা মুহাম্মদ দীন আহমদ ছিলেন সরকারী কর্মচারি। সেই সঙ্গে একজন উর্দু ও ফারসী ভাষার কবি এবং শেীখিন অভিনেতা। যা তৎকালিন মুসলিম শিক্ষিত সমাজে দুর্লভ ছিল্।স্কুল জীবনেই কিছু অভিনয় করেছিলেন। এবং ভালো গান গাইতেন। দেশ ভাগের পর ঢাকায় আসেন ১৯৫১ সালে চাকরি করেন একটি বেসরকারী প্রতিষ্টানে সেই সঙ্গে মঞ্চ নাটকে অভিনয় করা শুরু করেন। প্রথম বাংলাদেশে নির্মিত বানিজ্যিক ছবি "মুখ ও মুখোশ" এর পরিচালক মরহুম আবদুল জব্বার খান ছিলেন তার আপন দুলাভাই। "মুখ ও মুখোশ"এর পর থেকে তিনি অব্যহত গতিতে এগিয়ে ঘগছেন তার পেশায়। সেই সঙ্গে এদেশের কোটি মানুষের মুখে অন্তত কিছু সময়ের জন্য হাসি ফুটিয়ে তাদের হৃদয়ে স্থান দখল করে নিয়েেছন। সাইফুদ্দিন আহমদ বাংলা ছাড়াও উর্দু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। প্রধানত কেীতুক অভিনেতা হলেও কিছু চলচ্চিত্র ও নাটকে ভিলেন এর অভিনয় ও করেছেন।গান জানলেও মাত্র একটি ছবিতে কন্ঠ দিয়েছেন তিনি।"সুন্দরী" ছবিটিতে ডুয়েট গান গেয়েছেন রুনা লায়লার সাথে। চারশ এর ও অধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। "মুখ ও মুখোশ" ছাড়া তার অভিনিত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে আছে নাচঘর(উর্দু),জোয়ার এলো,নয়নতারা,নীল আকাশের নিচে,আঁকাবাঁকা,বড় ভালো লোক ছিল,চন্দ্রনাথ, রামের সুমতি সহ আরো অনেক। সিনেমার পাশাপাশি রেডিও ও মঞ্চেও দাপটের সাথে অভিনয় করে গেছেন তিনি। কিছুদিন ঠিকাদার হিসেবে ব্যবসাও করেছিলেন তিনি। আবাে চিত্রালীতে কলকাতার বিশিষ্ট কেীতুক অভিনেতা ভানু বন্দোপাধ্যায় এর সাক্ষাতকার গ্রহন করেছিরেন তিনি। দুই শ্রেষ্ঠ কেীতুক অভিনেতার সেই সাক্ষাতকারও হয়েছিল কৈাতুকে ভরপুর।

১৯৬০ সালে সুফিয়া অাহমদ এর সাথে বিয়ে হয় তার। ছেলে সাইদ আহমদ সেনাবাহিনীতে। ২০০৪ সালে তিনি লেঃ কর্নেল ছিলেন। তিন মেয়ে শিখা,সিমি, সাজি সকলেই মাস্টার্স ডিগ্রিধারি ও বিবাহিতা। প্রায় পরিনিত বয়সেই তার মৃত্যু হলেও তার অভাবটি পুর্ন হবার নয়। কারন তার মাপের কোন কেীতুক অভিনেতা কেন অভিনেতাই বাংলাদেশে এখন নেই।
আল্লাহ তাকে জান্নাত নসীব করুন।

দ্রস্টব্য: প্রবন্ধের তথ্যগুলি বিভিন্ন পত্রিকা এবং খন্দকার মাহমুদুল হাসান রচিত ও ঐতিহ্য প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত বই "চলচ্চিত্র" থেকে নেয়া।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন