বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

উপদেষ্টার উপদেশ বা অপদেশ

হানিফ সংকেতের একটি কেীতুক নকশায় দেখেছিলাম চাকরি প্রার্থির উল্টাপাল্টা জবাব আর তোষামোদে বিরক্ত ইন্টারভিউগ্রহিতা শেষ পর্যয়ে চাকরি প্রার্থিকে তার উপদেষ্টার চাকরি দেন। চাকরি প্রার্থি সাথে সাথে তার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেন। এর পর বস তার উপদেষ্টার কাছে প্রথম যে উপদেশ চান তা হচ্ছে," কিভাবে গলাধাক্কা দিয়ে আপনাকে আমি এখান থেকে বের করে দিব"।

উপদেস্টা বা অ্যাডভাইজার পদটি ব্যবসায় ও রাজনৈতিক উভয় ব্যাপারে বহুল প্রচলিত। সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই উপদেষ্টা নিয়োজিত হন। এরা সাধারনত কোন নিয়মিত বেতনভাতা পাননা। বৈঠক বা কোন নিদৃষ্ট বিষয়ে ফাইলে পরামর্শ বা উপদেশ দেন এবং সেই অনুযায়ি ফি পেয়ে থাকেন। তারা সাধারনত মন্ত্রনালয়,বিভাগ কিংবা কোন প্রকল্প অনুসারে নিয়োজিত হন। এর বাইরেও সরকার উচ্চ পর্যায়ে কিছু উপদেষ্টা নিয়োগ করে থাকেন যারা সাধারনত মন্ত্রি সভার সদস্যের পদমর্যাদা ভোগ করে থাকেন কিন্তু মন্ত্রিদের মত সাংবিধানিক অধিকার সমূহ তাদের জন্য প্রযোজ্য হয়না। এক সয় জ্বালানী উপদেষ্টার দ্বায়িত্ব পালনকারী বর্তমানে বন্দি আমারদেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের এক লেখায় একবার পড়েছিলাম উপদেষ্টা হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন কতটা কষ্টের। কারন সাংবিধানিক ক্ষমতা নাথাকায় কোন ফাইলে তারা সাইন করতে পারেননা কিন্তু কোন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে থাকলে সেই মন্ত্রনালয় পরিচালনায় তাকে অংশ গ্রহন করতে হয় মন্ত্রি বা প্রতিমন্ত্রিদের মতই। সুতারাং সরকারের মন্ত্রি/প্রতিমন্ত্রি পদমর্যাদায় কর্মরত উপদেষ্টাদের দায়িত্ব কম নয়।
এহেন উপদেষ্টা যদি বলে বসেন শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারীরা হচ্ছেন দেশের শত্রু তবে তার যোগ্যতা সম্পর্কে সন্দেহ হওয়া অতি স্বাভাবিক। যদিও তার নামের আগে যুক্ত আছে ডক্টর শব্দটি।
বানিজ্য বিভাগে এস,এস,সি পরিক্ষার্থি রাও জানে শেয়ারবাজার কি। শেয়ার বাজার থেকে কিভাবে বিভিন্ন কোম্পানি পুঁজি সংগ্রহ করে উৎপাদন ও ব্যবসায় খাটায়। হ্যা এটা সত্যি যে সেকেন্ডারি বাজারে শেয়ার হাত বদলের মাধ্যমে যে অর্থের লেনদেন হয় তা সরাসরি উৎপাদনে নিয়োজিত হয়না। কিন্তু এই লেনদেন কোম্পানি টির পরিচালনাকে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রন করে। যদিও আমাদের দেশে তা বিভিনন্ন কারনে পুরোপুরি সঠিকভাবে হয়না। তবুও এই বিনিয়োগ অবশ্যই জাতিয় অর্থনিতিতে প্রভাব ফেলে। কোম্পানির শেয়ারের মুল্য দিয়ে নির্ধারিত হয় কোম্পানিটির মুল্য। যা তার লাভ ক্ষতি নিরুপনের জ্যন অতি প্রয়োজনিয়। শেয়ার মার্কেট হচ্ছে যে কোন দেশের জাতিয় পুঁজি গড়ে তোলার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। একারনে ইংরেজিতে শেয়ারবাজারের আরেক নাম ক্যাপিটাল মার্কেট। একারনে প্রতিদিনই বিশ্বের প্রধান সংবাদ মাধ্যম গুলির সংবাদের বড় অংশ জুড়েই থাকে শেয়ারবাজারের খবর। নিয়মিত পত্রিকা পড়েন এমন সকল ব্যাক্তিই জানেন ১৯২৯ সালের দি গ্রেট ডিপ্রেশনের সূচনা হয়েছিল শেয়ার বাজারের পতন থেকেই এবং ২০০৭ সালের বিশ্ব ব্যাপি মন্দার শুরু ও স্টক মার্কেটের পতন থেকে। অর্থাত শেয়ার বাজারের অবস্থা অব্শ্যই অর্থ্নিতির অন্যান্য সূচকের সাথে সম্পর্কিত এবং এর কোন সমস্যা পুরো অর্থনিতিকে প্রভাবিত করে।
এখন সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ যদি বলে বসেন শেয়ার বাজারের দর পতন নিয়ে সরকারের কোন মাথাব্যাথা নাই তাহলে যে কোন সচেতন ব্যাক্তির মনেই প্রশ্ন জাগতে বাধ্য যে এই ব্ক্তব্য প্রদানকারী আদেী অর্থ্নিতির সম্পর্কে জানেন কিনা। শেয়ার বাজার রেগুলেশন ও তত্বাবধানের দ্বয়িত্ব সরকারের। এখন শেয়ার বাজারের টাকা যাতে সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় তা দেখার দায়িত্ব ও সরকারের। সরকার যদি সময়মত কোন কারনে সময়মত তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তা হলে সে দায়িত্ব সরকারের। বিশেষজ্ঞ গনের প্রায় ছমাস আগে দেয়া সতর্কবানি তখন আমলে নিলে আর যাই হোক এরকম আকাশপাতাল তফাত হতোনা। অন্য দিকে রাতারাতি সবকিছুকেই নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করতে গিয়ে পুরো বিষয়টি লেজে গোবরে করে দিয়েছে সরকার। এই অবস্থায় সরকারের কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবক্তিযদি ঢালাও ভাবে বিনিয়োগকারীদের দেশের শত্রু বলে অভিহিত করেন তা হলে সেই ইন্টারভিউ গ্রহনকারীর মত বলতে ইচ্ছে আপনি বরং সরকারকে সেই উপদেশ দিন কিভাবে আপনার মত অযোগ্য উপদেষ্টার হাত থেকে সরকার,দেশ ও জনগন রক্ষা পাবে।

২০,জানুয়ারি ২০১১, শেয়ার বাজারে ব্যাপক দরপতনের পর চট্টগ্রামে বিনিয়োগকারীদের প্রতিবাদ বিক্ষোভের ভিডিও দেখুন এই লিংকে।
[http://www.youtube.com/watch?v=CwglQEthLAY]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন