সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২

Palabodol

"পালাবদল" ম্যাগজিনটির মূল উদ্যোক্তা সম্ববত বিশিষ্ট সাংবাদিক জনাব মাসুমুর রহমান খলিলি। ১৯৯০ বা ৯১ সনেই এর প্রথম প্রকাশ। তখন সম্পাদক হিসেবে তার নামই বোধ হয় ছাপা হতো। আমি নিষ্চিত নই। এই ম্যাগাজিনটির সাথে প্রথম থেকেই যারা জড়িত ছিলেন লেখক হিসেবে তাদের মধ্যে বোধহয় মরহুম সৈয়দ আলি আহসান এবং আল মাহমুদের নাম নিলেই এই ম্যাগাজিনটির মান সম্পর্কে ধারনা পওয়া যাবে। আমি পালাবদল প্রথম পড়ি ১৯৯৩ সনের দিকে। তখন পালাবদলের উপদেষ্টা তালিকাতে ছিল সৈয়দ আলি আহসান,আল মাহমুদ,কমোডর(অবঃ)আতাউর রহমান সহ আরো দুয়েক জনের নাম। একটি সুস্থ,মান সম্পন্ন মননশিল ম্যাগাজিনের অভাব বাংলাদেশে সবসময় ছিল এবং এখনও আছে। কিনতু এর মধ্যে পালাবদল এক বিশেষ যুগ এর সৃিষ্ট করেছিল। বিচিত্রা তখনও প্রকাশিত হচ্ছে এবং যায়যায়দিন সম্ভবত পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এই ম্যাগাজিন গুলি ছিল মুলত নিউজ ভিিত্তক। প্রবন্ধ ও সাহিত্যভিত্তিক ম্যাগাজিন হিসেবে পালাবদল খুব দ্রুতই জনপ্রিয়তা অর্জন করে।পালাবদলের প্রতি সংখ্যাতেই প্রায় অনিবার্য উপষ্থিতি ছিল সৈয়দ আলি আহসানের। আর সেই লেখার বিষয়বস্তু ছিল নোবেল বিজয়িদের সম্পর্কে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা খেকে শুরু করে বেগুন রান্নার বিভিন্ন পদ্ধতি পর্যন্ত। পালাবদলেই প্রকাশিত হয়েছে সৈয়দ আলি আহসানের আত্মজীবনির বিশেষ বিশেষ অংশ নিয়ে লেখা। যার মধ্যে অতি গুরুত্ব পুর্ন তার বাংলা একাডেমির পরিচালক থাকাকালিন কর্মজীবন এবং বঙ্গবন্ধু যেরকম দেখেছি প্রবন্ধটি। আল মাহমুদ পালাবদলের প্রতিষ্ঠার সাথে যুক্ত ছিলেন বলে তার আত্মজৈবনিক গ্রন্থ "বিচুর্ন আয়নায় কবির মুখ" এ উল্লেখ করেছেনে। আমি যখন পালাবদল পড়া শুরু করি তখন পালাবদলে ধারাবহিক ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে আল মাহমুদের অন্যতম শ্রেষ্ট সাহিত্যকির্তি উপন্যাস "কাবিলের বোন"। এমনকি েস সময় আমার পরিচিত কয়েকজন পালাবদল কিনতেন শুধু ওই উপন্যাসটির জন্য। আর আল মাহমুদের কবিতা তো ছিলই। এরা দুজন ছাড়াও নিয়মিত লেখকদের মধ্যে ছিলেন এবনে গোলাম সামাদ যার বিচিত্র বিষয়ের পান্ডিত্যপুর্ন অথচ সহজবোধ্য লেখা সকলকে আকর্ষন করত এবং কখনও বিতর্কের জন্ম দিত। আমার মনে আছে হোমিও চিকিৎসা বিষয়ে তার একটি লেখা নিয়ে বেশ কিছূদিন ধরেই বিতর্ক চলেছিল। আবুল খােয়র মুসলেহ উদ্দিন ও লিখতেন। তার উপন্যাস "কালো কফিন" যা বৃটিশ আমলের সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবীদের নেয়ে লেখা সেটি ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছিল পালাবদলে। তার রসালো ভাষায় লেখা গল্প ও প্রবন্দ্ধও নিয়মিতই প্রকাশিত হতো পালাবদলে। সম্ভবত তার শেষ উপন্যাস "মেধাবী মেয়ে" পালাবদলেই প্রকাশিত হয়েছিল এবং বিষয়বস্ত ও ভাষার কারনে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। আবদুল মান্নন সৈয়দ ও পরের দিকে নিয়মিত লিখতেন এবং তার আত্মজৈবনিক কলাম ষাটের দশক জনপ্রিয় হয়েছিল। দার্শনিক মরহূম অধ্যক্ষ দেওয়ান মুহাম্মদ আজরফ এর কয়েকটি গুরুক্বপুর্ন রচনাও পালাবদলে প্রকাশিত হয়েছে। নিয়মিত না হলেও মাঝেমাঝেই তার লেখা প্রকাশিত হতো। সাহিত্য বিষয়ে নিয়মিত লিখতেন মোশাররফ হোসেন খান ও সায়িদ আবুবকর। সায়িদ আবুবকর পালাবদলের মাধ্যমেই কবি হিেসেবে অনেকর কাছে পরিচিত হয়ে উঠেন। পরের দিকে নিয়মিত আরেকজন লেখক ছিলেন সাহিত্যিক এবং এক সময়ের গীতিকার আবু জাফর। তার "তুমিই পথ প্রিয়তম নবী তুমিই পথেয়" এবং ইকবাল সংক্রান্ত প্রবন্ধগুলি থবই জনপ্রিয় হয়েছিল্। বুলবুল সারওয়ার, হাসান আলিম তমিজউদ্দিন লোদি রা মাঝে মধে্যই লেখতেন। গল্প বা কলাম লিখতেন আফরোজা পারভিন পপি সহ কয়েকজন মহিলা সাহিত্যিক।
পালাবদলে সাময়িক প্রসঙ্গে নিয়মিত প্রবন্দ্ধ লিখতেন সালাউিদ্দন বাবর,মীযানুল করিম, মুহাম্মদ সিদ্দিক,আজিজুল হক বান্না,খায়রুর বাশার,হারুন জামিল,আহমদ জামিল সহ অনেকেই। তবে প্রথমদিকে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রসং্গে অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ লিখতেন গুরুত্বপুর্ন ও শিক্ষনিয় কলাম। পালাবদলের আরেকজন নিয়মিত লেখক ছিলেন লেঃ আবু রুশদ(অবঃ) বর্তমানে ডিফেন্স জার্নাল এর সম্পাদক। তিনিই প্রথম সম্ভবত সামরিক বাহিনি ও প্রতিরক্ষা সম্পের্ক অনেক কিছুকেই সাধারন পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করেন। তার বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির দিনগুলো ধারাবািহক আত্মজৈবনিক রচনা। সম্ভবত বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির বিষয়ে প্রথম কোন রচনা। সেই সঙ্গে তার থ্রিলার কারাকোরাম উপত্যকায় ও পালাবদলে প্রকাশিত হয়েছিল যা বেশ আলোড়নের সৃস্টি করে। বিজ্ঞান প্রসঙ্গে মরুহম ডঃ শহিদুল্লাহ মৃধার প্রবন্ধগুলি ছির তথ্যপুর্ন ও সুখপাঠ্য্। বিশেষত কয়েকটি বিষয়ে যেমন কাকড়া চাষ,দই উৎপাদন এবং নভোথিয়েটার প্রসঙ্গে তার লেখাগুলি ছিল গুরুত্বপুর্ন। পালাবদলের একটি ঈদ সংখ্যায় তিনি আইজাক আসিমভের সাইন্স ফিকশন গল্পও তিনি ানুবাদ করেছিলেন। তার স্ত্রী চেচনিয়ার অধিবাসি গাগায়েভা কিজিলগুল রোজা ও মাঝে মধ্যে পালাবদলে লিখতেন। পালাবদলের উপদেষ্টা কমোডর(অবঃ) আতাউর রহমানের ভ্রমন কাহিনিগুলি ছিল অত্যন্ত আকর্ষনিয়। বিচিত্র সব স্থানে তার ভ্রমনের অভিজ্ঞতা তিনি লিখেতেন যেসব স্থানের মধ্যে ছিল টিমবাকটু এবং হাওয়াই দ্বিপ।
পালাবদল নিয়মতিই প্রকাশিত হচ্ছিল প্রায় এক যুগের ও বেশি সময় ধরে। মাঝে মাঝে দুয়েকটি সংখ্যা মিস করলেও মোটামুটি ২০০৪ পর্যন্ত নিয়মিত প্রকাশিত হতো পালাবদল। মরহুম আবদুস সালাম সাহেবের সুপরিচালনা ও সম্পাদনায় এর শ্রিবৃদ্ধিও হচ্ছিল ধিরেধিরে। কলকাতার পাক্ষিক "দেশ" এর সাথে অন্তত লেখার মানের দিক দিয়ে তুলনা করার মত ম্যাগাজিন হয়ে উঠেছিল পালাবাদল। যদিও প্রিন্টিং এর ক্ষেত্রে খুব বেশি উন্নতি রাব করতে পারেনি। এর কারন সম্ভবত আর্থিক। পালাবদলে বিজ্ঞাপন ছিল খুবই কম।তার মধ্যে াাবার শেষের ৪-৫ বছর শেষ প্রচ্ছদের বিজ্ঞাপন যা ম্যাগাজিনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে দামি হয় তা থাকতো মরুহম সালাম সাহেবের নিজ প্রতিষ্ঠান সালেহীন ইনক এন্ড কেমিক্যালস এর বিজ্ঞাপন। তিনি এভাবে নিজের টাকা দিয়েই প্রত্রিকাটি চালাতেন। ভিতরে ইসলামি ব্যাংক এর একটি বিজ্ঞপন প্রায় থাকতো। এছাড়া কদাচিৎ অন্য কোন বিজ্ঞাপন দেখা যেত। ২০০২ সালের শেষ দিকে হুমায়ুন সাদেক চেীধুরি পালা বদলের নির্বাহী সম্পাদক হন। ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রায় নিয়মিতই প্রতাশিত হয়েছিল পালাবদল। কিন্তু এরপর বন্ধ হয়ে যায় । বর্তমান সময়ে এই পত্রিকাটির প্রয়োজন আবার অনুভব করছি অনেকেই। পালাবদলের সাথ যারা জড়িত ছিলেন তাদের কে অনুরোধ জানাচ্ছি পালাবদল আবার প্রকাশের ব্যাপরে উদ্যোগ নিতে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন