সোমবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচার। একজন ইরম শর্মিলা।

আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচার। একজন ইরম শর্মিলা।

লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০৪ নভেম্বর, ২০১৩, ০৩:২০:৪৩ রাত
আইনের শাসন কথাটি জনপ্রিয় যথেষ্ট। এর প্রবক্তারা আইনের শাসন এ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মানুষের সমাজ জিবনে শান্তিু ও সচ্ছলতা আসে বলে দাবি করেন। ইতিহাসে অনেক শাসকই দেখতে পাওয়া যায় যারা আইনের শাসক হিসেবে খ্যাত। যারা আইনের কাছে নিজের শাসন ক্ষমতা কে সমর্পন করে আইনের সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিয়েছিলেন। কিন্তু আইন যিনি তৈরি করেন তিনি যদি এমন আইন তৈরি করেন যে আইন তাকে আইনের উর্দ্ধে রাখবে তাহলে তিনি যে আইনই ভাঙ্গুন না কেন তিনি আইনের উর্দ্ধে থেকে যাবেন সে ক্ষেত্রে যেই ক্ষতিগ্রস্থ হোক বলা যাবেনা আইনের শাসন ভঙ্গ হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়াতেই ১৮৫৭ সালে সমগ্র ভারতবর্ষে অসংখ্য স্বাধিনতা সংগ্রামিকে ফাঁসিতে ঝুলান হয়েছিল কিংবা উড়িয়ে দেয়া হয়েছিল কামানের গোলায়। খোদ ভারত সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের বিচার করেছিল একটি চাটার্ড লিমিটেড কোম্পানি দ্বারা গঠিত আদালত। একটি স্বাধিন দেশের সম্রাটকে জোরপুর্বক আটক করে তথাকথিত বিচার এর মাধ্যমে নির্বাসন দিয়ে দাবি করা হয়েছিল আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে আদালতটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এভাবেই আইনের শাসন এর নামে ক্ষমতাশালিরা সবসময় নিজের কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করে গেছে। বাহাদুর শাহ জাফর থেকে মুহাম্মদ মুরসি পর্যন্ত অনেক রাষ্ট্রনায়ক,সেনাপতি জননেতা থেকে শুরু করে সাধারন মানুষকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে আইনের শাসন এর নামে। এ যেন হবুচন্দ্র রাজার গল্প। কাঁদলে মৃত্যদন্ডের আইন করে পোষা পাখির মৃত্যুতে নিজেই কেঁদে ফেলে শেষে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মৃত্যদন্ডে দন্ডিত হন।

বাস্তব জিবনে ফরাসি সেনাবাহিনীর ক্যপ্টেন আলফ্রেড ড্রেইফুস এর কাহিনী এই আইনের শাসন এর প্রতি সন্দেহযুক্ত করে তুলে সকলকে। ফরাসি সেনাবাহিনীর অফিসার ড্রেইফুস কে জার্মান পক্ষে গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগে যাবজ্জিবন কারাদন্ড দেয়া হয়। যদিও প্রকৃত দোষি ছিলেন তার সিনিয়র কর্নেল জর্জি পিকহার্ট। কিন্তু সামরিক বাহিনীর আইন অনুযায়ি সিনিয়র অফিসার এর বিরুদ্ধে অভিযোগ গৃহিত হয়নি। ড্রেইফুস এর স্ত্রী তার নির্দোষিতার সপক্ষে প্রমান যোগাড় করে ঘুরতে থাকেন সরকারের দ্বারে দ্বারে। ব্যার্থ হয়ে দারস্থ হন সাহিত্যিক দার্শনিক এমিল জোলার। জোলা তাকে প্রথমে সহায়তা করতে রাজি না হলেও তার কাগজপত্রগুলি দেখে নিশ্চিত হন ড্রেইফুস নিরপরাধ।এক প্রবন্ধে ত্রিব্র ভাষায় তিনি এ্ই অবিচারের প্রতিবাদ করেন। কিন্তু অবিচারের প্রতিবাদ এর জন্য তিনিই বিচারের মুখোমুখি হন আইনের শাসন কে বাধাগ্রস্থ করার অভিযোগে। এমনকি প্যারিসের রাস্তায় উচ্ছৃঙ্খল মানুষের হাতে অপমানিতও হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রমানিত হয় ড্রেইফুস নিরপরাধ। কিন্তু এই প্রমানের জন্য আইনের পথে কোন সুযোগ ছিলনা। জোলা, আনতোল ফ্রাস সহ কয়েকজন মানবতাবাদির নেতৃত্বে যে আন্দোলন গড়ে উঠে তার প্রেক্ষিতেই শেষ পর্যন্ত ফরাসি সরকার নতুন করে এই বিচার করতে বাধ্য হন। আইনের শাসন কিন্তু এখানে সত্যকে নয় বর্ং মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। 

আমাদের প্রতিবেশি ভারতের উত্তর পুর্বঅঞ্চলিয় রাজ্যগুলিতে জারি আছে আর্মড ফোর্সেস ষ্পেশাল পাওয়ার এক্ট বা আফস্পা নামে একটি আইন। যে আইনের বলে এই অঞ্চলে নিযুক্ত যে কোন সামরিক বা আধাসামরিক বাহিনি সদস্য এই অঞ্চলের যে কোন অধিবাসিকে আটক এমনকি হত্যাও করতে পারবেন যার জন্য কোন জবাবদিহি করতে হবেনা্। অর্থাত এই কাজ গুলি সাধারন দৃষ্টিতে অপরাধ বলে মনে হলেও আইনের দৃষ্টিতে এগুলি অপরাধ নয়। ২০০০ সালে এই আইনের বলেই ভারতিয় আসাম রাইফেলস এরসদস্যরা মন্পিুরের ইম্ফল জেলার মালম শহরে হত্যা করে বাসের জন্য অপেক্ষারত দশজন মনিপুর বাসি নারি-পুরুষ কে। এই ঘটনার দুইদিন পর এর বিচারের দাবিতে অনশন শুরু করেন এক সামান্য চাকুরিজিবি তরুনি। ইরম শর্মিলা চানু। ছোটবেলা থেকেই সপ্তাহে একদিন নিয়ম করে উপোষ থাকতেন ইরম শর্মিলা। ঘটনাটি ঘটে মঙ্গল বার। বৃহস্পতিবার তার নিয়মিত উপোষ এর দিন থেকে অনশন শুরু করেন শর্মিলা। দাবি আফস্পা আইন বাতিল এবং মনিপুরি সাধারন মানুষদের হত্যাকান্ডের বিচার। তিনদিন পর গ্রেফতার হন শর্মিলা ভারতিয় পেনাল কোড এর ৩০৯ ধারা (বাংলাদেশেও একই ধারায় একই আইন আছে) অনুযায়ি আত্মহত্যার চেষ্টার অপরাধে। পুলিশের হাতে থাকা অবস্থায় ও অনশন চালিয়ে যান শর্মিলা। জেল আইন এর দোহাই দিয়ে জোর করে তার নাক দিয়ে খাবার ঢুকান হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় দশ বছর নেসাল ফিডিং ও স্যালাইন এর উপর নির্ভর করে বেচে আছেন শর্মিলা। কখনও জেলে কখনও বা বাড়িতে। কিন্তু তার প্রতিবাদ তিনি বন্ধ করেননি। দশটি বছর তিনি ন্যায় বিচারের আশায় আইনের নামে অত্যাচারের প্রতিবাদে যন্ত্রনা সহ্য করে যাচ্ছেন। কিন্তু তার পরিবর্তে আইনের কাছ থেকে পেয়েছেন ন্যায়বিচারের বদলে আইনের শাসন এর নামে অবিচার। মহাত্মা গান্ধির দেশে এটা খুবই হাস্যকর নয়কি যে অনশন ধর্মঘটের দায়ে বিচারের মুখোমুখি হওয়া! কিন্তু আইনের শাসন নিশ্চিত করার জন্য শর্মিলা কিংবা বাস স্ট্যান্ড এর দশ নর-নারির চেয়ে আইন প্রনেতাদের ইচ্ছাতে কয়েকজন খুনি নিরপরাধ। শর্মিলা এই বছর দিল্লিতে আদালতের মুখোমুখি হয়ে সুষ্পষ্ট ভাষায় বলেছেন আত্মহত্যার কোন ইচ্ছা তার নাই। তিনি শুধু চান ভারত সরকার মানবতা বিরোধি আফস্পা আইন প্রত্যাহার করুন। কিন্তু আইন যতদিন আছে ততদিন মনিপুরের লেীহমানবি খ্যাত ইরম শর্মিলা চানুই বিচারের মুখোমুখি হবেন। হত্যাকারিরা নয়। নয় তাকে জোর করে নেসাল ফিডিং কারিরা।

আইনের শাসন যদি হয় এই তাহলে মানবতার স্থান কোথায়? আইন প্রনয়নকারিদের ইচ্ছাই যদি প্রদান করে আইনের মাধ্যমে হত্যাকে বৈধতা দেয়া তাহলে সেই আইনের শাসন এক জন্ অত্যাচারিত কে কি বঞ্চিত করবেনা ন্যায়বিচার থেকে। তাহলে মানবরচিত আইন যখন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার নামে মানুষকে বঞ্চিত করে তার প্রাপ্য ন্যায়বিচার এর অধিকার থেকে সেই আইন এর শাসন কি প্রতিষ্ঠা করতে পারে শান্তি।

মসজিদে শিশুরা এবং আমাদের দেশ।

মসজিদে শিশুরা এবং আমাদের দেশ।

লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০১ নভেম্বর, ২০১৩, ১০:৫২:৫১ রাত
বুখারি শরিফ এর ৪৮৬ নং হাদিসে রয়েছে " আবু কাতাদাহ(রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ(সাঃ) তার কন্যা জয়নাব ও আবুল আস বিন রবীয়ার পুত্র উমামাকে কাঁধে নিয়ে নামাজ পড়তেন। সিজদার সময় তাকে নামিয়ে রাখতেন,দাঁড়াবার কালে কাঁধে তুলে নিতেন"।

এই ধরনের আরেকটি হাদিস শুনেছিলাম রাসুল (সাঃ) এর পুত্র ইব্রাহিম কে কোলে নিয়ে নামাজ পড়ার কথা। এছাড়াও তার অন্য দুই নাতি হযরত হাসান(রাঃ) ও হযরত হুসাইন(রাঃ) তিনি নামাজ পড়ার সময় তার কাঁধে চেপে যেতেন বলে জানা যায়। রাসুল(সাঃ) তারা যতক্ষন উঠতনা ততক্ষন পর্যন্ত তাঁর সাজ'দা কে দির্ঘায়িত করতেন। এই দুটি ঘটনার পক্ষে সহিহ হাদিস আমার জানা নাই বলে তার রেফারেন্স দিতে পারছিনা তবে অনেক নির্ভরযোগ্য ব্যাক্তির লিখায় এর উল্লেখ দেখেছি। আরো অনেক সহিহ হাদিসে আছে রাসুল (সাঃ) বিভিন্ন কারনে নামাজের মাঝে কোন কাজ করেছেন এবং সেই নামাজেই আবার ফিরে এসেছেন। কোন শিশুর কাজ তাঁর নামাজ নষ্ট করেনি। 

অথচ আমাদের দেশে মসজিদে প্রতি ওয়াক্তেই অনেক ইমাম সাহেবরা কাতার বন্দি হওয়ার আহ্বান এর সাথে ছোট ছেলেদের পিছনে সরিয়ে দেয়ার কথা বলেন। অনেকই বলেন যে ছোট ছেলে কাতারের মধ্যে থাকলে নাকি নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। এর পক্ষে কোন শরিয়তি দলিল কিন্তু তারা উপস্থাপন করতে পারেননা। এই নিয়ে প্রশ্ন তুললে যে জবাব পাওয়া যায় তা হলো মুরুব্বিরা এ কথা বলেছেন বা বলছেন। অনেক সময় প্রশ্নকারিকেই বেয়াদব বলে অভিহিত করেন। তারা শরিয়তের দলিল এর চেয়ে মুরুব্বিদের কথাকেই গুরুত্ব বেশি দেন। এই অভিজ্ঞতা আরো একবার হোল আজকে । সমুদ্রের কাছে এক মনোরম পরিবেশের মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করছিলাম আজকে। খুতবা শেষ হওয়া মাত্র আমার পাশে দাড়ান এক বয়স্ক ব্যাক্তি সামনের কাতারে দাড়ান একবছর তিনেক বয়সি ছেলের হাত ধরে টান দিলেন এবং ছেলেটির পাশে দাড়ান অভিভাবক কে বললেন ছেলেটিকে পিছনে পাঠাতে। ছেলেটির অভিভাবক তাকে পিছনে পাঠিয়ে দিলেন। শেষ কাতারে আরো কয়েকটি ছেলের সাথে সে দাড়াল। ৫-৬ বছর বয়সি সেই ছেলেগুলি অভিভাবক দের হাত থেকে মুক্ত হয়ে নামাজে মনোযোগ না দিয়ে দুষ্টামিতে মত্ত হলো। নামাজ শেষে সেই বয়স্ক ব্যাক্তিই আবার দাবি করলেন যে এই শিশুগুলির জন্য তার নামাজ নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় সামনের কাতারে একজন একটি দৈনিক পত্রিকা বেশভালভাবেই ভাজ করে তার সামনে রেখেছিলন যাতে কোন ছবি দেখা না যায়। তাকেও সেই ব্যাক্তিটি খানিকটা হম্বিতম্বি করলেন যে তার জন্য নাকি সবার নামাজ নষ্ট হয়েছে। প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্বেয় মুসুল্লিটিকে নামাজ এর সময় নির্দিষ্ট জায়গা বাদ দিয়ে পরের কাতারের সামনে তিনি কেন দৃষ্টিপাত করেছিলেন সেই প্রশ্ন করিনি। এভাবে শিশুদের পিছনে সরিয়ে দিয়ে এবং তারা যখন অভিভাবক দের থেকে নামাজ শিক্ষার সুযোগ এর বদলে সাথিদের কাছে পেয়ে বয়স এর ধর্ম অনুযায়ি দুষ্টামি বা খেলায় লিপ্ত হওয়ার সুযোগ দিয়ে অাবার পরে তাদেরকে নামাজ নষ্ট করার জন্য বকাবকি করে তাদেরকে মসজিদে আসতে অনুৎসাহিত করা হয়। এভাবে শিশুকাল থেকে মসজিদে যেতে উৎসাহিত করার বদলে আমরা তাদের নিরুৎসাহিত করে কিভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করব?

এই ব্যাপারটি আমাদের মধ্যে এমনভাবে ঢুকে গেছে যে গত রমজানের ঈদে চট্টগ্রাম ষ্টেশন রোড জামে মসজিদের খতিব নামাজপুর্ব বয়ানে শিশুদের সাথে এই ধরনের আচরন না করার জন্য বারবার মুসুল্লিদের আহবান জানান সত্বেয় পরে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান। তিনি বলেন যে রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর নামাজ যাতে নষ্ট হয়নি তাতে আমাদের নামাজ কেন নষ্ট হবে।

আজকের এই অভিজ্ঞতার পর ঘরে এসে ইন্টারনেট এ পড়লাম একটি ছোট্ট সংবাদ। পোপ ভ্যাটিকানে ধর্মিয় ভাষন প্রদানের সময় একটি ছোট্ট ছেলে মঞ্চে উঠে পড়ে এবং একপর্যায়ে পোপের নির্দৃষ্ট চেয়ার টিতে বসে এবং পোপ এর আলখাল্লা ধরে টান দেয়। পোপ এর রক্ষিরা চকলেটের লোভ দেখিয়েও বাচ্চাটিকে অনেক্ষন পর্যন্ত নামাতে পারেনি। কিন্তু পুরা ঘটনার সময় পোপ তার ভাষন বন্ধ করেননি এবং বাচ্চাটি যখন তার পোষাক ধরে তখন একহাত নামিয়ে তাকে আদর করছিলেন। এই ঘটনাটি পড়ে আমার মনে পড়ল আল্লামা ইকবালের "জওয়াব-ই শিকওয়ার" সেই অমর পংতি।

"সুবিচার সে যে প্রকৃতির রীতি,

প্রকৃতি খেলাপ করেনি তার।

কাফের লভিল হুর গেলমান,

মুসলিম নীতি করিয়া সার।"

হায়দারাবাদ ট্রাজেডি। যে সত্য ৬৫ বছর পর প্রকাশিত হলো।

হায়দারাবাদ ট্রাজেডি। যে সত্য ৬৫ বছর পর প্রকাশিত হলো।

লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১০:৪৯:৫৫ রাত
হায়দারাবাদি বিরিয়ানি এখন আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার। কিন্তু এই বিরিয়ানির উৎপত্তি স্থল হায়দারাবাদ সম্পর্কে আমরা কতটুক জানি? 

আমাদের দেশের অনেকই জানেন অন্ধ্রপ্রদেশের ( শ্রিঘ্রই বিভক্ত হচ্ছে) রাজধানি শহর হলো হায়দারাবাদ। আর এই শহর বিখ্যাত হলো ভারতের আইটি হাব বা আইটি সিটি হিসেবে। কিন্তু আমরা জানিনা হায়দারাবাদ শুধু একটি শহর ছিলনা। ছিল একটি স্বাধিন দেশ যার আয়তন ছিল বাংলাদেশের চেয়ে বড়। এর ছিল নির্বাচিত সংসদ এবং সরকার। ছিল সম্বৃদ্ধ ইতিহাস,ঐতিহ্যবাহি সংস্কৃতি,উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা,জনবান্ধব প্রশাসন। ছিল শিল্প ও বানিজ্য ক্ষেত্রে তৎকালিন ভারতিয় উপমহাদেশের অন্য যে কোন অঞ্চলের চেয়ে অগ্রগামি। কিন্তু সেই সম্বৃদ্ধ হায়দারাবাদ রাজ্য এখন সিমাবদ্ধ একটি ক্ষুদ্র গন্ডিতে। আর সেই দেশের মানুষরা দির্ঘদিন আন্দোলন করে অতি সম্প্রতি তাদের পুরাতন সিমানায় রাজ্য ফিরে পেয়েছে। হায়দারাবাদ শহর প্রতিষ্ঠা গোলকুন্ডা ভিত্তিক কুতবশাহি বংশের আমলে। সম্রাট আওরঙ্গজেব এই অঞ্চলকে মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং এই অঞ্চল এর রাজধানি গোলকুন্ডা থেকে নিকটবর্তি হায়দারাবাদ এ স্থানান্তর করেন। সম্রাট আওরঙ্গজেব এর ইন্তেকালের পর এই অঞ্চলের সুবাদার নিজামুল-মুলক মীর কমরুদ্দিন খান আসফজাহ যিনি আওরঙ্গজেবের অন্যতম সেনাপতি ও মন্ত্রি ছিলেন তিনি হায়দারাবাদকে কেন্দ্র করে একটি স্বাধিন রাষ্ট্র স্থাপন করেন যার নামও দেন হায়দারাবাদ। তার উপাধি থেকে এই শাসক পরিবারকে বলা হতো নিজামশাহি। মুঘল সাম্রাজ্যের ক্ষয় এর মুখেও এই রাজ্য সম্বৃদ্ধির পথে এগিয়ে যায়। কিন্তু ইংরেজদের আগ্রাসি সাম্রাজ্যবাদি ষড়যন্ত্রের মুখে নিজামুল মুলক এর উত্তরাধিকারিদের মধ্যে শুরুহয় গৃহবিবাদ। ইংরেজদের সহায়তায় তার প্রপেীত্র মির নিযাম আলি খান হায়দারাবাদ এর তখতে আসিন হয়ে দেশের স্বাধিনতাকে অনেকাংশে বিকিয়ে দেন। প্রথমে মহিশুরের বাঘ টিপু সুলতান এর বিরুদ্ধে এবং পরে ১৮৫৭ সালের স্বাধিনতা সংগ্রামের সময় এই শাসকরা ইংরেজ দের প্রভুত সাহাজ্য করে। এই সময় ইংরেজ সরকার হায়দারাবাদকে দেশিয় রাজ্য হিসেবে স্বিকৃতি দেয়। আভ্যন্তরিন বিষয়ে হায়দারাবাদের স্বাধিনতা ছিল।

১৮৫৭ সালের পর হায়দারাবাদ হয়ে উঠে দিল্লি ও উত্তর ভারত থেকে বিতাড়িত মুসলিম অভিজাত ও বুদ্ধিজিবি শ্রেনির আশ্রয় স্থল। এই মুহাজির দের সহায়তা গড়ে উঠে হায়দারাবাদের শিক্ষা,সংস্কৃতি,শিল্প ও প্রশাসন। আধুনিক ও ইসলামি শিক্ষার সমন্বয়ে গড়ে উঠে এর শিক্ষা ব্যবস্থা। খনিজ সম্পদ আহরন এবং ইস্পাত শিল্পে হায়দারাবাদ হয়ে উঠে উপমহাদেশের অগ্রনি এলাকা। গঠন করা হয় নির্বাচিত সদস্য নিয়ে জনপ্রতিনিধিত্বশিল পার্লামেন্ট। এমনকি "হয়দারাবাদ সিভিল সার্ভিস" ও গঠন করা হয় দক্ষ প্রশাসন এর জন্য। উপমহাদেশ স্বাধিন হওয়ার সময় মাথাপিছু আয় ও জিবন যাত্রার মানের দিক দিয়ে হায়দারাবাদ এর অবস্থান ছিল সর্বাগ্রে। 

নেহেরু ও প্যাটেল এর নেতৃত্বে কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ যখন দেখেন যে উপমহাদেশকে কংগ্রেস এর একক শাসন এ আনা সচেতন মুসলিম জনতার উপস্তিতিতে অসম্ভব তখন শেষ পর্যন্ত ভারত বিভক্তি মেনে নিয়ে ক্ষমতা দখল করেন দিল্লিতে। কিন্তু তৎকালিন ভারতের এক তৃত্বিয়াংশই ছিল বিভিন্ন দেশিয় রাজার অধিন স্বাধিন রাজ্য। ভারত স্বাধিনতা আইন অনুসারে এই রাজ্যগুলির প্রশাসক দের স্বাধিনতা ছিল ইচ্ছেমত ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার বা স্বাধিন থাকার। কিন্তু বাস্তবে লর্ড মাউন্টব্যাটেন এর সহায়তাপুষ্ট নেহেরু সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি সরদার প্যাটেল কূট কেীশল ও শক্তি প্রয়োগ করে অল্প সময় এর মধ্যেই অধিকাংশ দেশিয় রাজ্যকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করেন। কিন্তু হায়দারাবাদের মত সম্বৃদ্ধ অর্থনিতির দেশকে গ্রাস করতে অল্প কিছু সময় নেন তিনি। রাজার সিদ্ধান্ত অনুযায়ি কাশ্মিরকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করলেও একই নিয়মে জুনাগড়ের পাকিস্তান অন্তর্ভুক্তি শক্তি প্রয়োগ করে নাকচ করেন তিনি এই যুক্তিতে যে রাজ্যের সংখাগরিষ্ঠ হিন্দু অধিবাসি ভারতে যোগদানে ইচ্ছুক। কিন্তু তাৎক্ষনিক ভাবে প্রায় সল্প হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ হায়দারাবাদে এই যুক্তিতে আক্রমন চালাতে পারেননি। ভারত উপমহাদেশ স্বাধিন হওয়ার সময় ভারতিয় সরকার কোষাগারের ন্যায্য অংশ পাকিস্তান কে দিতে অস্বিকাার করলে হায়দারাবাদ সরকার প্রধানমন্ত্রি মির লায়েক আলির উদ্যোগে পাকিস্তানকে ২০ কোটি টাকা ঋন প্রদান করে। এর বিরুদ্ধে ভারত সরকার সম্পুর্নভাবে ভারত দ্বারা পরিবেস্টিত হায়দারাবাদ এর আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করে। এছাড়া রামানন্দ তির্থ নামের এক উগ্রপন্থি ভারতিয় হিন্দু নেতার নেতৃত্বে তেলেঙ্গনা বিদ্রোহ নামেহায়দারাবাদের হিন্দুদের মধ্যে একটি বিদ্রোহ সৃষ্টির পয়াস করে। কিন্তু জনসমর্থন না থাকায় এই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়।এভাবে বিভিন্ন কেীশলে হায়দারাবাদকে গ্রাস করার চেষ্টা সফল না হলে ভারত শেষ পযর্ন্ত সরাসরি শক্তি প্রয়োগে হায়দারাবাদ দখল করতে উদ্যোগি হয়। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরিকল্পনা করা হলেও অভিযান শুরু হয় ১৩ ই সেপ্টেম্বর। পাকিস্তানের নেতা মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ এর ইন্তেকালের পরেই। এই অভিযানে ভারতিয় পক্ষে ছিল একটি আর্মাড ডিভিশন সহ তিনটি ডিভশন। যার বিপরিতে হায়দারাবাদের ছিল ২৪ হাজারের মত সেনা বাহিনী যার মাত্র ৬-৭ হাজার ছিল পুর্নাঙ্গ প্রশিক্ষিত ও অস্ত্র সজ্জিত। ভারতিয় আর্মাড ডিভিশনের দুই শতাধিক ট্যাংক এর বিপেরিতে ছিল কয়েকটি মাত্র আর্মাড কার সজ্জিত নামমাত্র একটি ক্যাভেলরি রেজিমেন্ট। ভারতিয় বিমান বাহিনীরর বিপরিতে হায়দারাবাদের কোন জঙ্গি বিমান ছিলনা। হায়দারাবাদের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এল ইদ্রুস ছিলেন প্রকৃতপক্ষে ভারতিয় চর। এই অবস্থায় ও ভারতিয় সেনাবাহিনীর হায়দারাবাদ জয় করতে পাচদিন লেগে যায়। যার কারন ছিল সৈয়দ কাশিম রিজভি এর নেতৃত্বে ইত্তাহাদুল মুসলিমিন এর সেচ্ছা সেবকদের গড়ে তুলা প্রতিরোধ। হায়দারাবাদ আক্রমন এর সময় ও দখল এর পর ভারতিয় বাহিনী হায়দারাবাদের সাধারন মানুষের উপর যে অত্যাচার চালায় তা তখনই মানবতাবাদি মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সে সময় ট্যাংক ও বিমান বাহিনীসহ যে সামরিক অভিযান হয়েছিল ভারত সরকার আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাকে দাবি করে পুলিশ একশ্যন বলে। কিন্তু ভারতিয় বাহিনির লুটতরাজ এবং নৃশংসতা এতটাই বেড়ে যায় যে তৎকালিন সরকার বাধ্য হয় একটি পার্লামেন্টারি তদন্ত কমিশন গঠন করতে। পন্ডিতসুন্দরলাল নামের একজন কংগ্রেস এমপির নেতৃত্বে গঠিত এই কমিশন ভারতপন্থি হলেও ভারতিয় বাহিনীযে সাধারন জনগনের উপর অত্যাচার চালিয়েছিল তা স্বিকার করতে বাধ্য হয়। কিন্তু সেই রিপোর্ট গত ৬৫ বছর আলোর মুখ দেখেনি। কিন্তু সম্প্রতি কেমব্রিজ এর ইতিহাস গবেষক সুনীল পুরষোত্তম এই রিপোর্টটি উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছেন। সেই রিপোর্ট এ ভারতিয় পার্লামেন্ট সদস্য রাই স্বিকার করেছেন চল্লিশ হাজার এর মত সাধারন নিরিহ মানুষ ভারতিয় বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে এবং বিপল পরিমান সম্পদ লুট করা হয়েছে। হায়দারাবাদ এর সুত্রে এই হত করা মানুষের সংখ্যা লক্ষাধিক। এই রিপোর্টে আরো স্বিকার করা হয় যে ভারতিয় বাহিনী এবং তার সহায়তা উগ্র হিন্দু জনতা একাধিক মুসলিম জনসংখ্যা সম্বৃদ্ধ গ্রাম ধ্বংস করেছে। নিজেদের তদন্ত কারিদের উল্লেখ করা এই নিয়ন্ত্রিত সত্যও বিশ্বের সর্ববৃহত গনতন্ত্রের! দেশ ভারত প্রকাশ করেনি এত বছর। কারন এতে ফেটে যাবে তথাকথিত ধর্মনিরেপেক্ষ গনতান্ত্রিক ভারতের সাম্রাজ্যবাদি চরিত্র।

১ম ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে যারা জিবনের বিনিময়ে রক্ষা করেছিল লাহোর কে।

১ম ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে যারা জিবনের বিনিময়ে রক্ষা করেছিল লাহোর কে।

লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১১:০৬:১৩ রাত
আগামি কাল ৬ই সেপ্টেম্বর। ১৯৬৫ সালের এই দিনে বিশাল ও উন্নত অস্ত্রসজ্জিত ভারতিয় বাহিনী আক্রমন করেছিল তৎকালিন যুক্ত পাকিস্তান। বিভক্ত পাঞ্জাব প্রদেশের সিমান্ত থেকে পাকিস্তানি পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানি ঐতিহাসিক শহর লাহোরের দুরত্ব ছিল মাত্র ৩০ মাইল। অত্যাধুনিক ট্যাংক ও জঙ্গি বিমান সজ্জিত ভারতিয় বাহিনী তাদের বিশালত্ব এবং সামরিক শক্তির উপর এতই আস্থাবান ছিল যে ভারতিয় সেনাপ্রধান জেনারেল জয়ন্ত নাথ চেীধুরি লাহোরের বিখ্যাত জিমখানা ক্লাবে লাঞ্চ এর দাওয়াত অগ্রিম দিয়ে দিয়েছিলেন সাংবাদিক এবং মন্ত্রিদের। কিন্তু এই বিশাল বাহিনী তার লক্ষ অর্জনে ব্যার্থ হয়। জয়ন্ত নাথ চেীধুরির দাওয়াত কখনই আর খাওয়া হয়নি। ভারতিয় সেনা প্রধানের এই সপ্ন যারা ভেঙ্গে দিয়েছিল তাদের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন আবদান রেখেছিল তৎকালিন ১ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট। ১৯৬৫ সালে ১ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ছিল তৎকালিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১১ ডিভিশনের ১০৬ ব্রিগেড এর অধিনে। ডিভিশন অধিনায়ক ছিলেন মেজর জেনারেল আবদুল হামিদ যিনি ১৯৭১ সালে পাক সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। ব্রিগেড অধিনায়ক ছিলেন ব্রিগেডিয়ার নওয়াজিস। আগষ্ট মাসের শেষ দিকেই এই বাহিনীকে লাহোর সিমান্তে মোতায়েন করা হয়। এই সিমান্ত ছিল পুরোপুরি সমতল একটি এলাকা। কৃত্রিমভাবে তৈরি বিআরবি খাল টি ছাড়া সিমান্ত থেকে লাহোর পর্যন্ত কোন প্রাকৃতিক বাধা ছিলনা। এই সেক্টরে গুরুত্বপুর্ন বেদিয়ান এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয় ১ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কে। এই রেজিমেন্ট এর তৎকালিন অধিনায়ক ছিলেন বাংলার বীর সেনানি লেফটেনান্ট কর্নেল এটিকে হক। কর্নেল হক দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বৃটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। পাকিস্তান স্বাধিন হওয়ার পর প্রথমে পাঞ্জাব রেজিমেন্ট ও পরে ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট এর অফিসার হিসেবে কাজ করেন। উপঅধিনায়ক ছিলেন মেজর মং খিউ। তিনি ছিলেন একজন রাখাইন উপজাতিয় অফিসার। তার বাড়ি কক্সবাজারের হ্নিলায়। তিনি ভারত বিভক্তির আগে আসাম রাইফেলস এ কমিশন পান। ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তানে বন্দি ছিলেন এবং দেশে ফিরে এসে সল্প সময় সেনাবাহিনীতে চাকরি করে অবসর নেন এবং বিআরটিসিতে চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১০ সালে তিনি মৃত্যবরন করেন। লেফটেনান্ট জিয়াউদ্দিন অ্যাডজুটেন্ট এর দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তিনি লেঃ কর্নেল( অবঃ) জিয়াউদ্দিন বীর উত্তম। কোয়ার্টার মাস্টার ছিলেন লেফটেনান্ট সাদেকুর রহমান যিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে পরবর্তিতে মেজর জেনারেল হয়েছিলেন। বর্তমানে মরহুম। "এ" বা আলফা কোম্পানির অধিনায়ক ছিলেন তৎকালিন ক্যাপ্টেন শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তার সম্পর্কে কিছু বলাই বাহুল্য। অন্য তিনটি কোম্পানির অধিনায়ক ছিলেন তিনজন পাঞ্জাবি মেজর ও ক্যাপ্টেন।সদ্য কমিশন প্রাপ্ত সেকেন্ড লেফটেনান্ট মাহমুদুল হাসান ও ছিলেন এই রেজিমেন্ট এ যিনি পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মেজরজেনারেল হন এবং তুরুস্কে রাষ্ট্রদুত থাকা অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। অল্প কয়েকজন কারিগরী ক্ষেত্রে কর্মরত এনসিও ছাড়া এই রেজিমেন্ট এর সকল সৈনিক ছিলেন বাঙ্গালি।

৬ ই সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ সালে রাত ৩;৪৫ এ ভারতিয় ৪ মাউন্টেন ডিভিশনের অধিনে দুই ব্রিগেড ভারতিয় সৈন্য ট্যাংক বাহিনী সহ সিমান্তে পাকিস্তানি সিমান্তরক্ষিদের ঘাঁটি গুলিতে হামলা শুরু করে। একই সাথে ১ম ইষ্টবেঙ্গল সহ অন্যান্য পাকিস্তানি অবস্থানে শুরু হয় প্রচন্ড গোলা বর্ষন। ভারতিয় বাহিনীর লক্ষ ছিল বিআরবি খাল পার হয়ে কসুর শহর দখল করে লাহোরের দিকে এগিয়ে যাওয়া। ১ম ইষ্টবেঙ্গল ছাড়া একটি মাত্র পাকিস্তানি ব্যাটালিয়ন এই রাস্তায় তাদের বাধা দিতে পারত। সিমান্ত দখল করে ভোর পাঁচটার দিকে ভারতিয় বাহিনী বিআরবি খালের পুর্বপাশের ১ম ইষ্টবেঙ্গল এর অবস্থানে হামলা করে। কিন্তু বাংলার বাঘদের পরাজিত করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ভারতিয় বাহিনীর ৫ম গার্ডস রেজিমেন্ট এক স্কোয়াড্রন ট্যাংক সহ আলফা কোম্পানির অবস্থানে আক্রমন চালায় কিন্তু পরাজিত হয়ে পিছনে হটে যায়। এরপর ভারতিয়রা সাঁজোয়া বাহিনী নিয়ে হামলা করে। পাকিস্তানের কাছে এই ট্যাংক প্রতিরোধের অস্ত্র বেশি ছিলনা। কিন্তু বাংলার বীর সৈনিক রা নিজের জীবন তুচ্ছ করে গ্রেনেড ও মাইন নিয়ে চলন্ত ট্যাংক এর উপর ঝাপিয়ে পরে। এই আত্মঘাতি আক্রমনের মুখে ভারতিয় বাহিনী অসংখ্য ট্যাংক হারিয়ে পিছিয়ে যায়। এই সময় ভারতিয় বাহিনী থেকে হাতাহাতি লড়াই করে কেড়ে নেয়া একটি পিটি-৭৬ মডেলের উভচর হালকা ট্যাংক এখনও চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টার এ সংরক্ষিত আছে। ৬ ও ৭ই সেেপ্টম্বর ভারতিয় বাহিনী একাধিকবার এভাবে ভারি অস্ত্র এবং বিমানবাহিনীর সহায়তা নিয়ে আক্রমন করলেও প্রত্যেকবারই ১ম ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট এর কঠোর প্রতিরোধের মুখে পরাজিত হয়। সেদিন যদি ১মইষ্ট বেঙ্গল এর সৈনিকেরা নিজের জিবন দিয়ে ভারতিয় আগ্রাসি বাহিনীকে না ঠেকাতো তাহলে সহজেই লাহোরের পতন হতে পারত যা পশ্চিম পাকিস্তানকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেলত। ১ম ইষ্ট বেঙ্গল শুধু লাহোরকেই রক্ষা করেনি। ভারতিয় হামলা ঠেকিয়ে পাল্টা হামলা চালিয়ে ভারতিয় সিমান্তের প্রায় আটমাইল ভিতরে খেমকরন শহরটি দখল করে নেয়। অবশ্য পরবর্তিতে এই শহরের দখল ছেড়ে কেীশলগত কারনে পিছিয়ে আসে ১ম ইষ্টবেঙ্গল। এই বিরত্ব পুর্ন যুদ্ধের জন্য ১ম ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে সর্বাধিক পদক লাভ করে। যার মধ্যে অধিনায়ক কর্নেল হক ও আলফা কোম্পনি অধিনায়ক জিয়াউর রহমান সিতারায়ে জুরায়াত পদক পান। 

১৯৬৫ সনের পাকভারত যুদ্ধের এটি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন সাফল্য পাকিস্তানের পক্ষে।

সিরিয়াতে সম্ভাব্য মার্কিন হামলা কেমন হতে পারে

সিরিয়াতে সম্ভাব্য মার্কিন হামলা কেমন হতে পারে

লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৯:৪২:২০ সকাল
প্রধান সহযোগি বৃটেন এর পার্লামেন্ট এ অনুমোদন না পাওয়ায় বৃটেনকে পাশে না পেলেও সিরিয়াতে মার্কিন আক্রমন এখন প্রায় নির্ধারিত। এই হামলার উদ্দেশ্য কিন্তু এখনও পরিস্কার নয়। সিরিয়াতে মার্কিন হামলার অবজেকটিভ হতে পারে কয়েক রকম যেমন

১.আফগানিস্তানের মত মিসাইল ও বিমান আক্রমন এবং আসাদ বিরোধিদের তথ্য ও অস্ত্রদিয়ে সহায়তা করে সরকারি বাহিনীকে পরাজিত করা এবং বিরোধিদের ক্ষমতায় বসান। এই সম্ভাবনা খুব বেশি নয় কারন সিরিয়ায় আসাদ বিরোধিদের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভাল নয়। 

২.ইরাকের মত সর্বাত্মক যুদ্ধের মাধ্যমে আসাদ সরকারের উচ্ছেদ। এটির সম্ভাবনা ও বেশি নয় কারন সিরিয়াতে সর্বাত্মক আক্রমনে রাশিয়া ও চিন যথেষ্ট বাধা দেবে। আসাদ সরকারের প্রতি সমর্থন থাকুক আর না থাকুক এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক বাহিনীর আরো উপস্থিতিকে রাশিয়া সহজে মেনে নেবেনা।

৩.লিবিয়া বা সুদানে ইতিপুর্বে চালান আক্রমনের মত মিসাইল আক্রমন। বা পাকিস্তানের মত ড্রোন আক্রমন। এই ধরনের আক্রমনের সম্ভাবনাই বেশি।

বর্তমানে এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি আছে সিরিয়ার সম্পুর্ন পুর্ব সিমান্ত জুড়ে ইরাকে। সেখানে মার্কিন সেনা,মেরিন ও বিমানবাহিনির লক্ষাধিক সৈন্য রয়েছে সর্বাত্মক যুদ্ধে যারা সিরিয়ান বাহিনির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবে। দক্ষিনে জর্দানেও মার্কিন সামরিক উপস্থিতি আছে। সিরিয়ার উত্তরে তুরুস্কে ন্যাটোর অধিন মার্কিন সেনাবাহিনী রয়েছে তবে সিরিয়ার আসাদ সরকারের বিরোধি হলেও তুরুস্ক মার্কিন বাহিনীকে নিজের ভুখন্ড ব্যবহার করতে না ও দিতে পারে। সিরিয়ার পশ্চিমে ভুমধ্য সাগরে রয়েছে মার্কিন ষষ্ঠ নেীবহর বা সিক্সথ ফ্লিট যার সদর দপ্তর ইটালির নেপলস বন্দরে। এই নেীবহরে আছে প্রায় দুইশত বিমান সহ চল্লিশটির অধিক যুদ্ধ জাহাজ। এরমধ্যে রয়েছে বিমানবাহি জাহাজ, ল্যান্ডিং শিপ ডক, এবং সাবমেরিন। এই বহরের অধিনে এক ডিভিশন পরিমান মেরিনসেনা ও আছে। জার্মানি,ইটালি ও ফ্রান্স এর ঘাঁটিগুলি তে রয়েছে আরো জঙ্গি বিমান ও ইউএস সেনাবাহিনীর কয়েক ডিভিশন সৈন্য। ফ্রান্স মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্রকে পুর্ন সমর্থন দিলেও ফরাসি নেীবাহিনী সিরিয়া আক্রমনে উপযুক্ত নয়। 

বর্তমান পরিস্থিতিতে যা মনে হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়া আক্রমন সিরিয়ার মধ্যের স্ট্র্যাটেজিক টার্গেটগুলিতে বিমান ও মিসাইল হামলার মধ্যেই সিমাবদ্ধ থাকবে তবে সিরিয়ার ভুমধ্যসাগরিয় উপকুলে সল্প মাত্রার উভচর আক্রমন ও হতে পারে। বিশাল মার্কিন বাহিনীর মুকাবিলায় সিরিয়ার আছে তিন লক্ষ এর অধিক সেনাবাহিনী, ৩০০ এর বেশি জঙ্গি বিমান সজ্জিত বিমানবাহিনী, বেশ উন্নত মানের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং একটি উপকূলিয় নৈীবাহিনী। সিরিয়ান সেনাবাহিনী যান্ত্রিক ও ভারি কামান দ্বারা সুসজ্জিত হলেও বর্তমানে তা দেশের মানুষের সাথেই যুদ্ধে লিপ্ত এবং এই বাহিনীর মনোবল ভাল থাকার কথা নয়। বাহিনীতে সুন্নি মুসলিমদের প্রাধান্য রয়েছে যদিও আহলে বাইত ও শিয়াদের প্রাধান্য কমান্ডিং পজিশনগুলিতে বেশি। রাশিয়ান ও চাইনিজ অস্ত্র ও ট্যাংক সজ্জিত বাহিনী ইলেকট্রনিক্স ও অন্যান্য টেকনলজির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনেক পিছিয়ে থাকলেও সম্মুখ যুদ্ধে তা যুক্তরাষ্ট্রকে খুববেশি সুবিধা দেবেনা। সিরিয়ান বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনীও খুবই শক্তিশালি। পুরোন ও নতুন রাশিয়ান বিমান প্রতিরক্ষা মিসাইল সিষ্টেম এর সাথে অত্যাধুনিক চাইনিজ রাডার মার্কিন রাডার জ্যামিং টেকনলজিকেও পরাস্ত করতে সক্ষম হতে পারে। সিরিয়ান বিমান বাহিনী মুলত রাশিয়ান মিগ-২১,২৩,২৫,ও ২৯ বিমান দিয়ে সজ্জিত। অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক রাডার ও মিসাইল সজ্জিত মার্কিন বিমানের তুলনায় আক্রমন সক্ষমতা ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে থাকলেও সল্প পাল্লার প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে এই বিমানগুলি মার্কিন বিমানের সাথে সমানে সমানে লড়তে সক্ষম। সিরিয়ার প্রতিরক্ষার দুর্বলতম স্থান হচ্ছে তার নেীবাহিনী। নেীবাহিনীর সবচেয়ে বড় যুদ্ধ জাহাজ হচ্ছে রাশিয়ার তৈরি দুটি পেটওয়া শ্রেনীর ফ্রিগেট যা প্রায় পঞ্চাশ বছরের পুরোন মডেলে। অস্ত্র ও রাডার ব্যবস্থা উন্নত করা হলেও এগুলি অপারেশনাল রেঞ্জ বেশি নয়। এছাড়াও আছে উসা শ্রেনীর মিসাইল বোট। এই ধরনের মিসাইল বোট এখনও রাশিয়া, চিন,বাংলাদেশ সহ অনেক দেশ ব্যবহার করছে কিন্তু এমনকি বাংলাদেশ ও এই বোটগুলিতে ব্যবহার এর জন্য নতুন মিসাইল ও রাডার সিষ্টেম স্থাপন করেছে। কিন্তু সিরিয়ান যুদ্ধ জাহাজগুলি ততটা উন্নয়ন করা হয়নি। অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক মিসাইল ডিফেন্স এবং ক্লোজ ইন ওয়েপন সিষ্টেম যুক্ত মার্কিন যুদ্ধজাহাজের বিরুদ্ধে পুরোন টেকনলজির মিসাইল বেশি কার্যকর হবে বলে মনে হয়না। মার্কিন সাবমেরিন ও সিরিয়ার জন্য বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে যদিও সিরিয়ার উপকুল খুব বেশি গভির নয়। 

সর্বশেষ প্রাপ্ত সংবাদ অনুসারে সিরিয়াতে আক্রমনে সিরিয়াতে আক্রমনের উপযুক্ত দুরুত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাচটি "আরলি বার্ক" শ্রেনীর মিসাইল ডেষ্ট্রয়ার মোতায়েন করেছে। এই যুদ্ধ জাহাজগুলি অত্যাধুনিক এইজিস কমব্যাট সিষ্টেম সজ্জিত ৮০০০-৯০০০ টন ওজনের জাহাজ। এই জাহাজগুলি প্রতিটি নব্বইটি করে টমাহক ও হারপুন মিসাইল সহ বিভিন্ন ধরনের মিসাইল বহন করতে পারে। টমাহক মিসাইল যা ক্রুজ মিসাইল বলে পরিচিত তা ৪৫০ কেজি বিস্ফোরক সহ ১৫৫০ মাইল দুরের লক্ষে আঘাত হানতে পারে। অত্যাধুনিক জিপিএস ও স্যাটেলাইট গাইডেনস সজ্জিত এই মিসাইল এর টার্গেট ভেদ করার হার ৯৫% এর ও বেশি। এছাড়াও এই জাহাজ গুলিতে আছে পাঁচ ইঞ্চি বা ১২৭ মিলিমিটার কামান মিসাইল ও বিমান প্রতিরক্ষার ক্লোজ ইন ওয়েপন সিস্টেম ও টর্পেডো। এই জাহাজগুলি ছাড়াও এক ব্যাটালিয়ন এর মেরিন সেনাবাহি একটি উভচর আক্রমন জাহাজ ও মোতায়েন করা হয়েছে। এই ধরনের জাহাজ মোতায়েন থেকে এটাই মনে হচ্ছে যে সিরিয়াতে মার্কিন হামলা এখনই সর্বাত্মক হচ্ছেনা বা সিরিয়ার বিদ্রোহিদের বিশেষ সহায়তার উদ্দেশ্য ও তাদের নাই। তারা সিরিয়ার ষ্ট্র্যাটেজিক কিছু টার্গেট এ মিসাইল ও ড্রোন আক্রমন করতে চায় এবং সল্প মাত্রায় সিরিয় উপকূলেও আক্রমন চালাতে পারে। কিন্তু আসাদ সরকার উচ্ছেদ এর জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা তারা এখনই সম্ভবত নেবেনা। মার্কিন এই ষ্ট্র্যাটেজিক টার্গেটগুলি যে অবশ্যই ইসরাইল এর জন্য যেখানে সুবিধা সেখানে নির্ধারন করা হবে তা বলাই বাহুল্য। উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকায় এই আক্রমন আসাদ সরকারের বেশি ক্ষতি করবে বলে মনে হয়না। যদি পুর্ব দিকে ইরাক থেকে মার্কিন স্থল হামলা শুরু হয় তাহেলে তা মুকাবেলায় আসাদ সরকার বেশি অসুবিধায় পড়তে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে রাশিয়া তার ব্ল্যাক সি বা কৃষ্ন সাগরিয় নেীবহরের সাহাজ্যে হস্তক্ষেপ করতে পারে। যা অবস্থানগত কারনে ইরাক বা আফগানিস্থানে সম্ভব ছিলনা। 

সবকিছু মিলিয়ে এই যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য বা মুসলিম বিশ্বের জন্য কোন সুসংবাদ বয়ে আনবেনা। প্রকৃতপক্ষে সারা বিশ্বের মানুষদের জন্যও নয়। সিরিয়াতে এক রাসায়নিক আক্রমনে যতজন মানুষ মারা গেছে গত একমাসে মিসরে তার চেয়ে বেশি মানুষ সেনাবাহিনীর গুলিতে মৃত্যবরন করলেও মিসরের সরকারের ব্যাপার পশ্চিমা বিশ্ব নিরব।

এইচএসসি পড়লেই সকলে প্রোগ্রামার!

এইচএসসি পড়লেই সকলে প্রোগ্রামার!

লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১০:৩৯:২১ রাত
২০১৩ সাল থেকে এইচএসসি তে চালু হয়েছে নতুন কারিকুলাম। এই কারিকুলাম এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যে বিষয়টি সংযুক্ত হয়েছে তা হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। এইচএসসির সকল বিভাগেই বাংলা ও ইংরেজির সাথে এই বিষয়টি বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। বর্তমান যুগে এই বিষয়টির প্রয়োজন নিয়ে দ্বিমত পোষন করার সুযোগ কোনভাবেই নাই। কিন্তু এই বিষয়টির সিলেবাসে যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তা কতটা সকল বিভাগের শিক্ষার্থিদের জন্য উপযোগি তা সিলেবাস প্রনয়নকারীরা ভেবেছেন বলে মনে হয়না। এইচএসসির সিলেবাসে দেয়া হয়েছে এইচটিএমল এর সাহাজ্যে ওয়েবপেজ তৈরি। অথচ বর্তমানে ওয়েবপেজ তৈরির জন্য ড্রিমওয়েভার বা ফ্রন্টপেজ এর মত প্যাকেজ সফটওয়্যার পাওয়া যায়। এমনকি প্রফেশনাল ওয়েব ডিজাইনার রাও এই ধরনের প্যাকেজ ব্যবহার করেন। ওয়েব ডিজাইনার ছাড়া আর কারো এই এইচটিএমএল নিয়ে বিষদ জানার প্রয়োজন এখন কতটুক আছে তা চিন্তার বিষয়। সাধারন ব্যবহারকারিরা এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে ব্লগপর্যন্ত তৈরি করছে এইচটিএমএল প্রাথমিক জ্ঞানটুকুও ছাড়াই। এই সিলেবাসে আরো যুক্ত করা হয়েছে ডাটাবেজ ডিজাইন। ডাটাবেজ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা সকলের জন্য জরুরি হলেও সফটওয়্যার তৈরি ছাড়া সাধারন ব্যবহারকারীদের এ সম্পর্কে বেশি জানা জরুরি নয় কোনভাবেই। এই সিলেবাসের সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয়টি বোধহয় সকলের জন্য বাধ্যতামুলক সি++ প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে প্রোগ্রাম তৈরি। একসময় কম্পিউটার ব্যাহারকারি মাত্রই প্রোগ্রামার ছিল(কমপক্ষে ২৫ বছর পুর্বে!)।কিন্তু বর্তমানে কম্পিউটার ব্যবহারের জন্য প্রোগ্রামিং জানা কোনভাবেই জরুরি নয়। সি++ প্রোগ্রামিং স্নাতক ইঞ্জিনিয়ারিং এর কম্পিউটার ছাড়া অন্য বিভাগে পড়ানো হয় তৃতিয় বা চতুর্থ বষেয়। এছাড়াও এই সিলেবাসে বুলিয়ান এলজেব্রা সহ বেশ কিছু গানিতিক বিষয় ও আছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিজ্ঞান,মানবিক,বানিজ্য এমনকি সঙ্গিত সহ সকল বিভাগে বাধ্যতা মুলক বিষয়ের জন্য এই সিলেবাস উপযোগি কিনা। আমাদের দেশে অনেক এই আছেন যারা গনিতে পিছিয়ে। শুধু আমাদের দেশেই নয় সারা বিশ্বেই এই অবস্থা। এখন মানবিক বা সঙ্গিত বিভাগের শিক্ষার্থিদের যাদের গনিতের জ্ঞান ও এপটিচ্যুড কম তাদেরকে বুলিয়ান গনিত এবং সি++ প্রোগ্রামিং শিখানো কিভাবে সম্ভব হবে। অন্যদিকে এমনকি বিজ্ঞান বিভাগের অনেক শিক্ষার্থীদের জন্যও এই জ্ঞান কোন কাজে আসবেনা। বাধ্যতামুলক বিষয় হওয়ার কারনে এই বিষয়ে পাস করা এবং উচ্চতর বিভাগের জন্য ভালনাম্বার তোলাও অপরিহার্য হবে। ফলাফল এইবিষয়টির শিক্ষা জীবনমুখি না হয়ে হয়ে যাবে কোচিং ও প্রাইভেট মুখি। এইচএসসি পর্যায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষা হওয়া উচিত শিক্ষার্থিকে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক জ্ঞান ও এর ব্যবহার এর উপর। কিন্তু এই সিলেবাস দেখে মনে হচ্ছে এর প্রনেতারা কম্পিউটার শিক্ষা ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষা এই দুই বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য বুঝেননা।

জেনারেল আতাউল গনি ওসমানি। একটি সংগ্রামের ইতিহাস।

জেনারেল আতাউল গনি ওসমানি। একটি সংগ্রামের ইতিহাস।

লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১০:১৯:৪২ সকাল
আজ ১লা সেপ্টেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানির জন্মবার্ষিকি। সৎ এই মানুষটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রিয় ক্ষমতার অতি নিকটে অবস্থান করেও কখনও ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেননি। দেশকে ভয়ংকর বিপদজনক পরিস্থিতি হতে রক্ষা করেছিলেন নিজের জিবনের উপর ভয়ংকর ঝুঁকি নিয়ে। শত্রুর আক্রমনের মুখে অকুতোভয় হয়ে দৃঢ়চিত্তে নেতৃত্ব দিয়েছেন স্বাধিনতা সংগ্রামে। 

এই বীর সৈনিক এর জন্ম সিলেটের সুনামগঞ্জে ১৯১৮ ইংরেজি সালে। পৈতৃক বাড়ি বর্তমান সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার দয়ামির এ। তার পিতা খান বাহাদুর মফিজুর রহমান ওসমানি ছিলেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। মা জুবেদা খাতুন। তারা হযরত উসমান (রাঃ) এর বংশদ্ভুত বলে ওসমানি বা উসমানি উপাধি ব্যবহার করেন। তার এদেশে বসবাস কারি প্রথম পুর্বপুরুষ ছিলেন শাহ নিজামউদ্দিন ওসমানি যিনি হযরত শাহজালাল এর সাথে সিলেট আগমন করেছিলেন্। সিলেট তখন আসাম প্রদেশ এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাদের পরিবার ছিল উচ্চ শিক্ষিত। যখন বাংলাভাষি বিশেষ করে মুসলিম গ্রাজুয়েট এর সংখ্যা ছিল প্রতি জেলায় গড়ে একজনেরও কম তখনই তাদের পরিবারে চারজন গ্রাজুয়েট ও মাস্টার্স ডিগ্রিধারি ছিলেন। সিলেট সরকারি হাই স্কুল থেকে মেট্রিক পরিক্ষা উত্তির্ন হয়ে তিনি আলিগড় যান। সেখান থেকে এফ,এ ও বি,এ পরিক্ষায় উত্তির্ন হন। ভুগোলে মাষ্টার্স এর ছাত্র থাকা কালে ১৯৩৮ সালে তিনি তৎকালিন বৃটিশ ভারতিয় সেনাবাহিনীতে যোগদেন। দেরাদুনে ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি থেকে ১৯৪০ সালের অক্টোবর মাসে কমিশন লাভ করেন। তিনি ইন্ডিয়ান আর্মি সার্ভিস কোর এ পোস্টিং পান। উল্লেখযোগ্য তখন সাধারনত কোন ভারতিয় অফিসারকে পদাতিক বা সাজোঁয়া বাহিনিতে পোষ্টিং দেয়া হতোনা এবং বিশেষ করে বাঙ্গালি কোন অফিসারকে তো নয়ই। আর্টিলারি বা গোলন্দাজ বাহিনীর জন্য নির্বাচিত ও প্রশিক্ষিত হলেও এই নিতির জন্য তাকে সরবরাহ বা সাপ্লাই এন্ড ট্রান্সপোর্ট বাহিনীতে নিয়োগ করা হয়। পরবর্তিতে দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধ পুর্বভারত পর্যন্ত বিস্তৃত হলে এই নিতি পরিতক্ত হয়। জেনারেল ওসমানি সেকেন্ড লেফটেনান্ট হিসেবে একটি সাপ্লাই ডিপোতে অফিসার হিসেবে যোগ দেন। এরপর তাকে মোটর ট্রান্সপোর্ট ব্যাটালিয়নের সাথে তৎকালিন বার্মা ফ্রন্টে প্রেরন করাহয়। ১৯৪১ সালে তিনি ক্যাপ্টেন পদে উন্নিত হন। ১৯৪২ সালে তিনি অস্থায়ি মেজর পদে উন্নিত হন। তৎকালিন বিশাল বৃটিশ সেনাবাহিনীতে তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ মেজর। মেজর র্যাংক এই তিনি বার্মা ফ্রন্টে একটি মোটরাইজড ট্রান্সপোর্ট ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বপালন করেন যা সাধারনত লেঃকর্নেল র্যাংক এর জন্য নির্ধারিত। দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তি ও উপমহাদেশের স্বাধিনতার পর তিনি পাকিস্তানের পক্ষে অপশন দেন। ১৯৪৭ সালে তিনি লেফটেনান্ট কর্নেল পদে উন্নিত হন এবং কোয়েটা স্টাফ কলেজ থেকে পিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। জেনারেল ওসমানি স্বেচ্ছায় আবার মেজর র্যাংক এ রিভার্সন গ্রহন করেন এবং পাকিস্তানে পদাতিক বাহিনীতে যোগদেন। মেজর ও লেঃকর্নেল হিসেবে তিনি পাঞ্জাব রেজিমেন্ট ও পাকিস্তান আর্মির হেডকোয়ার্টারএ গুরুত্বপুর্ন দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫১ সালে পুনরায় লেঃ কর্নেল পদে উন্নিত হন এবং ৫/১৪ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট এর কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এরপর ৯/১৪ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট এরও অধিনায়ক হিসেবে ছিলেন। ১৯৫৩ সালে প্রথম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বগ্রহন করেন। এই ব্যাটালিয়ন ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য সবচেয়ে বেশি পদক লাভ করে। আর বাংলাদেশের স্বাধিনতা যুদ্বে এই ব্যাটালিয়ন সহ ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট এর অবদান আলোচনার অপেক্ষা রাখেনা। ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর অগ্রযাত্রায় তার অবদান অপিরিসিম। তিনি তৎকালিন ইপিআর এর উপ-পরিচালক হিসেবেও কাজ করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি চট্টগ্রামে ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টার এর কমান্ডেন্ট পদে যোগ দেন। এরপর ১৯৫৬ সালে কর্নেল পদে উন্নিত হন এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে স্টাফ অফিসার হিসেবে যোগ দেন। মাত্র ১৬ বছরে সেকেন্ড লেফটেনান্ট হতে কর্নেল পদে উন্নিত হলেও তৎকালিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙ্গালি বিরোধি দৃষ্টিভঙ্গি ও অন্যান্য ঔপনিবেশিক মানসিকতার জন্য তিনি এরপর আর প্রমোশন পাননি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে তখন এবং এখনও পুর্নাঙ্গ কর্নেল পদে অবসর গ্রহন করার ঘটনা খুবই কম। স্ট্রাকচার অনুযায়ি কেউ এক থেকে চার বছরের বেশি কর্নেল পদে থাকেননা। এবং কর্নেল পদে পদন্নোতি পেলেই ধনে নেয়া হতো তিনি যথাসময়ে ব্রিগেডিয়ার পদে উন্নিত হবেন। কিন্তু কর্নেল ওসমানির বাঙ্গালি মানসিকতা এবং সোজাসাপ্টা স্পষ্টবাদি আচরন তার প্রতি তৎকালিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের বিদ্বেষ পরায়ন করে তোলে। তারা তিনি আর্মি সার্ভিস কোরের অফিসার ছিলেন বলে উচ্চ পদের জন্য অযোগ্য বলে প্রচার করে। তখন পাকিস্থান সেনাবাহিনীতে পদাতিক ও সাঁজোয়া ছাড়া অন্য কোরের সদস্যদের কে হীন চোখে দেখা হতো। অথচ জেনারেল ওসমানি দক্ষতার সাথে তিনটি পদাতিক ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বদেন। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অতি গুরুত্বপুর্ন অপারেশন অধিদপ্তরে উপপরিচালক হিসেবে যোগদেন। ১৯৬৫ সালের পাক- ভারত যুদ্ধের সময় তিনি এই পদে ছিলেন। এই দপ্তরের দায়িত্ব সামরিক বাহিনীর সকল অপারেশনাল ও যুদ্ধ সংক্রান্ত কার্যক্রম নিয়ন্ত্রন ও পরিকল্পনা। তাকে এই সময় সার্ভিসে তার জুনিয়র অফিসারদের অধিনে কাজ করতে হয়েছিল কিন্তু তথাপি তিনি দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথেই তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তার চাকরির পচিশ বছর অতিক্রান্ত হলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাকে সন্মানজনকভাবে অবসর প্রদান করে। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে থাকতে সবসময় বাঙ্গালি সৈনিকদের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন ছিলেন এবং ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টার এর কমান্ডন্ট ও সামরিক হেডকোয়র্টারে কর্মরত থাকার সময় তার অবদানের জন্য তখন থেকেই পাপা টাইগার নামে খ্যাত ছিলেন। অবসর গ্রহনের পর তিনি সিলেটে বসবাস করতে থাকেন। যদিও পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাকে প্রাপ্য সন্মান প্রদান করেনি তথাপি ব্যাক্তিগত ভাবে পশ্চিম পাকিস্তানি অফিসারদের অনেকই তাকে সন্মান করতেন এবং পুর্ব পাকিস্তানে উচ্চপদে পোষ্টিং পাওয়া অনেক অফিসারই তার সাথে দেখা করে যেতেন। তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে এলাকার জনগনের দাবিতে রাজনিতিতে যোগদেন এবং আওয়ামি লিগের টিকেটে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে তিনি বুঝে নেন যে পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেনা। তিনি তৎকালিন কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত বাঙ্গালী সৈনিকদের একত্রিত করা শুরু করেন। কিন্তু তৎকালিন আওয়ামি লীগ নেতৃত্ব প্রকৃত অবস্থা অনুধাবনে ব্যার্থ হয় এবং ২৫শে মার্চ পাক সেনাবাহিনীর অভিযানেরমুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তিনি সেদিনই রাতে ঢাকা ত্যাগ করেন এবং অনেক কষ্টে হবিগঞ্জেরে তেলিয়াপারা দিয়ে সিমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যান। ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুরে অস্থায়ি সরকার গঠিত হলে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এর পদ গ্রহন করেন। দক্ষ ও দেশপ্রেমিক অফিসার হওয়ার কারনে তিনি সেসময় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অনেকের কাছেই অপছন্দনিয় ছিলেন। প্রবল জাতিয়তাবাদী ওসমানিকে ভারতিয় সরকার ও সেনাবাহিনীও ভয় করে চলত। ভারতিয় সেনাবাহিনীর যেসকল অফিসার ১৯৭১ সালের মুক্তি যুদ্ধ নিয়ে লিখেছেন তাদের সবাই ই তার অবদান এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। বর্তমান সরকার কতৃক বিশেষ ভাবে সন্মানিত ভারতিয় সেনাবাহিনীর ইহুদি লেঃজেঃ জেএফআর জ্যাকব লিখেছেন তার সাথে কাজ করা নাকি তার পক্ষে কঠিন ছিল। তিনি মুক্তি যুদ্ধের একপর্যায়ে ভারতিয় চাপে থাকা তৎকালিন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিরোধ হওয়ায় পদত্যাগ করেছিলেন কিন্তু অন্যান্য অফিসার ও মুক্তিযোদ্ধাদের তিব্র প্রতিবাদ ও দাবির মুখে তা প্রত্যাহার করেন। কিন্তু ভারতিয়রা তাকে ভয় করতো বলে চুড়ান্ত বিজয়ের সময় পাকবাহিনীর আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে তাকে উপস্থিত থাকতে দেয়া হয়নি। স্বাধিন বাংলাদেশে তিনি ১৯৭২ সালের ৭ই এপ্রিল পর্যন্ত তিনি সর্বাধিনায়ক এর পদে থাকেন এবং এরপর পুর্নাঙ্গ জেনারেল র্যাংক এ অবসর নিয়ে তৎকালিন মন্ত্রিসভায় নৈী ও বিমান চলাচল বিষয়ক মন্ত্রি হিসেবে যোগদেন। 

ওসমানি স্বাধিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে পাকিস্তান প্রত্যাগত অফিসারদের আত্মিকরনের পক্ষে বলিষ্ঠ ভুমিকা পালন করেন। এমনকি সেময় মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের যে দুই বছর সিনিয়রিটি দেয়া হয় তারও প্রবল প্রতিবাদ করেন ওসমানি। ১৯৭৩ সালে তিনি আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং মন্ত্রিসভায় যোগদেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কে খুবই শ্রদ্ধা করলেও তার নিতির সাথে তিনি একমত ছিলেননা। ১৯৭৫ সালের শুরুতে যখন একদলিয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয় তখন তিনি এর তিব্র প্রতিবাদ করেন। দলিয় বৈঠকে যখন প্রায় সকলেই এর পক্ষে বক্তব্য দিচ্ছিল তখন তিনি শেখ মুজিবর রহমানের উদ্দেশ্যে বলেন যে আমরা ইয়াহিয়া খানকে সরিয়ে কোন মুজিব খানকে চাইনা। শেষ পর্যন্ত এপ্রিল মাসে একদলিয় বাকশাল প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এর প্রতিবাদে সংসদ সদস্য ও দলিয় পদ থেকে পদত্যাগ করেন। বাকশালি শাসন এর প্রতিবাদে তিনিই প্রথম আওয়াজ তুলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট শেখ মুজিবর রহমান নিহত হলে তিনি খন্দকার মুশতাক এর সরকারে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন। ৩রা নভেম্বর খালেদ মুশাররফ এর নেতৃত্বে যে বিদ্রোহ হয় তিনি এই বিদ্রোহ প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। সফল না হলেও যখন শাফায়াত জামিল এর নেতৃত্বে কয়েকজন তরুন অফিসার বঙ্গভবনে বৈঠকরত তৎকালিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অস্ত্র সহ প্রবেশ করে ও গুলি চালানর চেষ্টা করে তখন অকুতভয় জেনারেল ওসমানি নিজের জিবনের ঝুকি নিয়ে তাদের প্রতিরোধ করেন। এরপর ৭ই নভেম্বর সিপাহি বিপ্লবের সময় তিনি আবারও বঙ্গভবনে যান এবং এবারও দেশকে দঙ্গা হাঙ্গামা ও গৃহযুদ্ধের হাত থেকে রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি এ সময় ক্ষমতার অতি কাছে ছিলেন এবং সামান্য চেষ্টা করলেই তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চপদ অধিকার করতে পারতেন কিন্তু তিনি সেই চেষ্টাও করেননি। 

বিচারপতি আবু সাদাত মুহাম্মদ সায়েম এর নেতৃত্ব প্রথমে সরকার গঠিত হয় এবং তার পর জেনারেল জিয়ার নেতৃত্বে সরকার পরিচালিত হয়। জেনারেল ওসমানি ১৯৭৬ সালে জাতিয় জনতা পার্টি গঠন করেন এবং ১৯৭৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেনারেল জিয়াউর রহমানে বিরুদ্ধে আওয়ামিলিগ সহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল সমর্থিত প্রার্থি হিসেবে প্রতিদদ্বিতা করেন। ১৯৮১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও তিনি প্রতিদদ্বিতা করেন সতন্ত্র প্রার্থি হিসেবে। এসময় তিনি সিলেটেই সাধারনত অবস্থান করতেন এবং বিভিন্ন জাতিয় বিষয়ে মতামত ও পরামর্শ দিতেন। ১৯৮৪ সালের ১৬ ই ফেব্রুয়ারি এই মহান যোদ্ধা লন্ডনে ইন্তেকাল করেন। তাকে সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয়। 

চিরকুমার জেনারেল ওসমানি ছিলেন একজন অত্যন্ত সৎ ব্যাক্তি। অতি সাধারন জিবনযাপন করতেন তিনি। সৈনিকদের মত ক্যাম্পখাটে ঘুমাতেন। মগে করে চা পার করতেন। সাধারনত গেঞ্জি পাজামা পরে থাকতেন ঘরে। অনুষ্ঠানে শেরওয়ানি বা পাজামা পাঞ্জাবি পরে যেতেন। সিলেটে তার পেনশনের টাকায় ও উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির আয় দিয়ে জিবন কাটাতেন। একটি পুরোন গাড়ি ছিল যা সামরিক বাহিনিতে কর্মরত অবস্থায় কিনেছিলেন। 

ব্যাক্তিগত শ্রদ্ধা কখনও তাকে সত্য ও ন্যায়পরায়নপরতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। আবার ব্যাক্তিগত বিরোধও কারো প্রতি প্রাপ্য সন্মান দেয়ায় বাধা দেয়নি। 

শেখ মুজিবর রহমানের প্রতি আমৃত্য শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন কিন্তু তার নিতির প্রশ্নে তিব্র সমালোচনা করেছেন। বিশিষ্ট ও প্রবিন রাজনিতিবিদ রা যখন বাকশালে যোগ দিচ্ছেন কিংবা নিরব থেকেছেন তখন নবিন রাজনিতিক হয়েও ন্যায়ের পক্ষে উচ্চ কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছেন এবং সাহসের সাথে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আজিবন গনতন্ত্রের সমর্থক এই ব্যাক্তি। আবার ১৯৭৫ সাল থেকে জেনারেল জিয়াউর রহমানের সাথে ব্যাক্তিগত পর্যায়ে বিরোধ থাকলেও এবং তার বিপক্ষে নির্বাচনে প্রার্থি হলেও জিয়ার শাহাদাতের পর তিনি তার জানাজার প্রথম সারিতে উপস্থিত থেকেছেন। তাকে কবরে নামানর সময় পাশে ছিলেন এবং প্রথম কবর জিয়ারত করে সামরিক ষ্টাইলে সন্মান প্রদর্শন করেছেন। বাংলাদেশকে স্বাধিন ও সার্বভৈীম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠায় তার অবদান সর্বোচ্চ। কিন্তু দুঃখের বিষয় বর্তমানে তিনি যেন হারিয়ে গেছেন নতুন প্রজন্মের সম্মুখ থেকে। স্বাধিনতার সংগ্রাম তো এখন একনেতা ও একদলের ব্যাক্তিগত সম্পত্তি হয়ে গেছে। আর মিডিয়াও এই প্রবল সাম্রাজ্যবাদ বিরোধি ব্যাক্তিটিকে এখন এড়িয়ে চলতেই ইচ্ছূক কারন জেনারেল ওসমানি তার স্বাধিন মানসিকতার জন্য তৎকালিন ভারত সরকারের চক্ষুশুল ছিলেন। তার সেই মানসিকতার জন্য আজ তথাকথিত সুশীল মিডিয়ার কাছেও তিনি গ্রহনযোগ্য নন। কিন্তু যতই চেষ্টা করা হোক বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে তার নাম মুছে ফেলা অসম্ভব।
বিষয়: বিবিধ

বিজ্ঞানের একটি যুগের সমাপ্তি। অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম।

বিজ্ঞানের একটি যুগের সমাপ্তি। অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম।

লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ১৬ মার্চ, ২০১৩, ০৭:৫২:৫৫ সন্ধ্যা
তখনও হাই স্কুলের ছাত্র। বিজ্ঞান মেলায় অংশ নিয়েছিলাম যতটা না উৎসাহে তার চেয়ে বেশি হুজুগে। মেলার সমাপ্তির দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক পুরুস্কার বিতরন করলেন। কাঁচা পাকা চুলের আকর্ষনিয় চেহেরা। সেই সঙ্গে অতি আকর্ষনিয় কন্ঠ। বড় বড় কথা না বলে সহজ সরল ভাষায় প্রসংসা আর উৎসাহ দিলেন কচি বিজ্ঞানীদের! সবচেয়ে সুন্দর লেগেছিল তার ভাষা । খাঁটি বাংলায় কিন্তু তথাকথিত পারিভাষিক শব্দ বিহীন তার বিজ্ঞান বিষয়ক সহজ-সরল বক্তৃতা। সেই দিনই প্রথম জেনে ছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই অধ্যাপকের নাম। জামাল নজরুল ইসলাম। আস্তে আস্তে জানলাম আরো অনেক কিছু। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা ছেরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন এই কথাটা প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু এইটাই ছিল সত্য।

২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯ সালে জন্ম নেন অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করে চলে যান তৎকালিন পশ্চিম পাকিস্তানের মারির লরেন্স কলেজে। সেখান থেকে সিনিয়র কেমব্রিজ উত্তির্ন হয়ে আবার আসেন কলকাতার বিখ্যাত সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। বি.এসসি উত্তির্ন হয়ে এবার পারি দেন ইংল্যান্ড এ। কেমব্রিজের ট্রিনিট্রি কলেজ থেকে ফলিত গনিত বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে ১৯৬৪ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর প্রথম অধ্যাপনা শুরু করেন ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড এ। এরপর যোগ দেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ থিউরেটিকাল 

এস্ট্রোনমিতে। ১৯৮২ পর্যন্ত প্রধানত কেমব্রিজেই কর্মরত ছিলেন। এরমাঝে কিছুদিন ক্যালিফোর্নিয়া ইনসটিটিউট অফ টেকনলজি ও লন্ডন কিংস কলেজেও অধ্যাপনা করেন। আশির দশকের শুরুতে পারিবারিক কারনে দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালিন ভাইস চ্যান্সেলর ইতিহাসবিদ ডঃ আবদুল করিমের সহায়তায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদেন তিনি। বাকি জিবন কাটিয়ে দিয়েছেন এখানেই দেশের এবং দশের সেবা করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তার প্রতিষ্ঠিত ভৈাত ও গানিতিক বিজ্ঞান গবেষনা কেন্দ্র মূলত তার চেষ্টায় বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিক মানের গবেষনাগারে পরিনিত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বপালন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে অবসর নিলেও আবার প্রফেসর এমেরিটাস হিসেবে যোগদেন তিনি। দেশের সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার অবদান বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।

ডক্টর জামাল নজরুল ইসলাম আজকেই ছেড়ে চলে গেছেন আমাদের মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে। আমরা তার রুহএর মাগফিরাত কামনা করছি।