সোমবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

হায়দারাবাদ ট্রাজেডি। যে সত্য ৬৫ বছর পর প্রকাশিত হলো।

হায়দারাবাদ ট্রাজেডি। যে সত্য ৬৫ বছর পর প্রকাশিত হলো।

লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১০:৪৯:৫৫ রাত
হায়দারাবাদি বিরিয়ানি এখন আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার। কিন্তু এই বিরিয়ানির উৎপত্তি স্থল হায়দারাবাদ সম্পর্কে আমরা কতটুক জানি? 

আমাদের দেশের অনেকই জানেন অন্ধ্রপ্রদেশের ( শ্রিঘ্রই বিভক্ত হচ্ছে) রাজধানি শহর হলো হায়দারাবাদ। আর এই শহর বিখ্যাত হলো ভারতের আইটি হাব বা আইটি সিটি হিসেবে। কিন্তু আমরা জানিনা হায়দারাবাদ শুধু একটি শহর ছিলনা। ছিল একটি স্বাধিন দেশ যার আয়তন ছিল বাংলাদেশের চেয়ে বড়। এর ছিল নির্বাচিত সংসদ এবং সরকার। ছিল সম্বৃদ্ধ ইতিহাস,ঐতিহ্যবাহি সংস্কৃতি,উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা,জনবান্ধব প্রশাসন। ছিল শিল্প ও বানিজ্য ক্ষেত্রে তৎকালিন ভারতিয় উপমহাদেশের অন্য যে কোন অঞ্চলের চেয়ে অগ্রগামি। কিন্তু সেই সম্বৃদ্ধ হায়দারাবাদ রাজ্য এখন সিমাবদ্ধ একটি ক্ষুদ্র গন্ডিতে। আর সেই দেশের মানুষরা দির্ঘদিন আন্দোলন করে অতি সম্প্রতি তাদের পুরাতন সিমানায় রাজ্য ফিরে পেয়েছে। হায়দারাবাদ শহর প্রতিষ্ঠা গোলকুন্ডা ভিত্তিক কুতবশাহি বংশের আমলে। সম্রাট আওরঙ্গজেব এই অঞ্চলকে মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং এই অঞ্চল এর রাজধানি গোলকুন্ডা থেকে নিকটবর্তি হায়দারাবাদ এ স্থানান্তর করেন। সম্রাট আওরঙ্গজেব এর ইন্তেকালের পর এই অঞ্চলের সুবাদার নিজামুল-মুলক মীর কমরুদ্দিন খান আসফজাহ যিনি আওরঙ্গজেবের অন্যতম সেনাপতি ও মন্ত্রি ছিলেন তিনি হায়দারাবাদকে কেন্দ্র করে একটি স্বাধিন রাষ্ট্র স্থাপন করেন যার নামও দেন হায়দারাবাদ। তার উপাধি থেকে এই শাসক পরিবারকে বলা হতো নিজামশাহি। মুঘল সাম্রাজ্যের ক্ষয় এর মুখেও এই রাজ্য সম্বৃদ্ধির পথে এগিয়ে যায়। কিন্তু ইংরেজদের আগ্রাসি সাম্রাজ্যবাদি ষড়যন্ত্রের মুখে নিজামুল মুলক এর উত্তরাধিকারিদের মধ্যে শুরুহয় গৃহবিবাদ। ইংরেজদের সহায়তায় তার প্রপেীত্র মির নিযাম আলি খান হায়দারাবাদ এর তখতে আসিন হয়ে দেশের স্বাধিনতাকে অনেকাংশে বিকিয়ে দেন। প্রথমে মহিশুরের বাঘ টিপু সুলতান এর বিরুদ্ধে এবং পরে ১৮৫৭ সালের স্বাধিনতা সংগ্রামের সময় এই শাসকরা ইংরেজ দের প্রভুত সাহাজ্য করে। এই সময় ইংরেজ সরকার হায়দারাবাদকে দেশিয় রাজ্য হিসেবে স্বিকৃতি দেয়। আভ্যন্তরিন বিষয়ে হায়দারাবাদের স্বাধিনতা ছিল।

১৮৫৭ সালের পর হায়দারাবাদ হয়ে উঠে দিল্লি ও উত্তর ভারত থেকে বিতাড়িত মুসলিম অভিজাত ও বুদ্ধিজিবি শ্রেনির আশ্রয় স্থল। এই মুহাজির দের সহায়তা গড়ে উঠে হায়দারাবাদের শিক্ষা,সংস্কৃতি,শিল্প ও প্রশাসন। আধুনিক ও ইসলামি শিক্ষার সমন্বয়ে গড়ে উঠে এর শিক্ষা ব্যবস্থা। খনিজ সম্পদ আহরন এবং ইস্পাত শিল্পে হায়দারাবাদ হয়ে উঠে উপমহাদেশের অগ্রনি এলাকা। গঠন করা হয় নির্বাচিত সদস্য নিয়ে জনপ্রতিনিধিত্বশিল পার্লামেন্ট। এমনকি "হয়দারাবাদ সিভিল সার্ভিস" ও গঠন করা হয় দক্ষ প্রশাসন এর জন্য। উপমহাদেশ স্বাধিন হওয়ার সময় মাথাপিছু আয় ও জিবন যাত্রার মানের দিক দিয়ে হায়দারাবাদ এর অবস্থান ছিল সর্বাগ্রে। 

নেহেরু ও প্যাটেল এর নেতৃত্বে কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ যখন দেখেন যে উপমহাদেশকে কংগ্রেস এর একক শাসন এ আনা সচেতন মুসলিম জনতার উপস্তিতিতে অসম্ভব তখন শেষ পর্যন্ত ভারত বিভক্তি মেনে নিয়ে ক্ষমতা দখল করেন দিল্লিতে। কিন্তু তৎকালিন ভারতের এক তৃত্বিয়াংশই ছিল বিভিন্ন দেশিয় রাজার অধিন স্বাধিন রাজ্য। ভারত স্বাধিনতা আইন অনুসারে এই রাজ্যগুলির প্রশাসক দের স্বাধিনতা ছিল ইচ্ছেমত ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার বা স্বাধিন থাকার। কিন্তু বাস্তবে লর্ড মাউন্টব্যাটেন এর সহায়তাপুষ্ট নেহেরু সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি সরদার প্যাটেল কূট কেীশল ও শক্তি প্রয়োগ করে অল্প সময় এর মধ্যেই অধিকাংশ দেশিয় রাজ্যকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করেন। কিন্তু হায়দারাবাদের মত সম্বৃদ্ধ অর্থনিতির দেশকে গ্রাস করতে অল্প কিছু সময় নেন তিনি। রাজার সিদ্ধান্ত অনুযায়ি কাশ্মিরকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করলেও একই নিয়মে জুনাগড়ের পাকিস্তান অন্তর্ভুক্তি শক্তি প্রয়োগ করে নাকচ করেন তিনি এই যুক্তিতে যে রাজ্যের সংখাগরিষ্ঠ হিন্দু অধিবাসি ভারতে যোগদানে ইচ্ছুক। কিন্তু তাৎক্ষনিক ভাবে প্রায় সল্প হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ হায়দারাবাদে এই যুক্তিতে আক্রমন চালাতে পারেননি। ভারত উপমহাদেশ স্বাধিন হওয়ার সময় ভারতিয় সরকার কোষাগারের ন্যায্য অংশ পাকিস্তান কে দিতে অস্বিকাার করলে হায়দারাবাদ সরকার প্রধানমন্ত্রি মির লায়েক আলির উদ্যোগে পাকিস্তানকে ২০ কোটি টাকা ঋন প্রদান করে। এর বিরুদ্ধে ভারত সরকার সম্পুর্নভাবে ভারত দ্বারা পরিবেস্টিত হায়দারাবাদ এর আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করে। এছাড়া রামানন্দ তির্থ নামের এক উগ্রপন্থি ভারতিয় হিন্দু নেতার নেতৃত্বে তেলেঙ্গনা বিদ্রোহ নামেহায়দারাবাদের হিন্দুদের মধ্যে একটি বিদ্রোহ সৃষ্টির পয়াস করে। কিন্তু জনসমর্থন না থাকায় এই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়।এভাবে বিভিন্ন কেীশলে হায়দারাবাদকে গ্রাস করার চেষ্টা সফল না হলে ভারত শেষ পযর্ন্ত সরাসরি শক্তি প্রয়োগে হায়দারাবাদ দখল করতে উদ্যোগি হয়। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরিকল্পনা করা হলেও অভিযান শুরু হয় ১৩ ই সেপ্টেম্বর। পাকিস্তানের নেতা মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ এর ইন্তেকালের পরেই। এই অভিযানে ভারতিয় পক্ষে ছিল একটি আর্মাড ডিভিশন সহ তিনটি ডিভশন। যার বিপরিতে হায়দারাবাদের ছিল ২৪ হাজারের মত সেনা বাহিনী যার মাত্র ৬-৭ হাজার ছিল পুর্নাঙ্গ প্রশিক্ষিত ও অস্ত্র সজ্জিত। ভারতিয় আর্মাড ডিভিশনের দুই শতাধিক ট্যাংক এর বিপেরিতে ছিল কয়েকটি মাত্র আর্মাড কার সজ্জিত নামমাত্র একটি ক্যাভেলরি রেজিমেন্ট। ভারতিয় বিমান বাহিনীরর বিপরিতে হায়দারাবাদের কোন জঙ্গি বিমান ছিলনা। হায়দারাবাদের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এল ইদ্রুস ছিলেন প্রকৃতপক্ষে ভারতিয় চর। এই অবস্থায় ও ভারতিয় সেনাবাহিনীর হায়দারাবাদ জয় করতে পাচদিন লেগে যায়। যার কারন ছিল সৈয়দ কাশিম রিজভি এর নেতৃত্বে ইত্তাহাদুল মুসলিমিন এর সেচ্ছা সেবকদের গড়ে তুলা প্রতিরোধ। হায়দারাবাদ আক্রমন এর সময় ও দখল এর পর ভারতিয় বাহিনী হায়দারাবাদের সাধারন মানুষের উপর যে অত্যাচার চালায় তা তখনই মানবতাবাদি মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সে সময় ট্যাংক ও বিমান বাহিনীসহ যে সামরিক অভিযান হয়েছিল ভারত সরকার আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাকে দাবি করে পুলিশ একশ্যন বলে। কিন্তু ভারতিয় বাহিনির লুটতরাজ এবং নৃশংসতা এতটাই বেড়ে যায় যে তৎকালিন সরকার বাধ্য হয় একটি পার্লামেন্টারি তদন্ত কমিশন গঠন করতে। পন্ডিতসুন্দরলাল নামের একজন কংগ্রেস এমপির নেতৃত্বে গঠিত এই কমিশন ভারতপন্থি হলেও ভারতিয় বাহিনীযে সাধারন জনগনের উপর অত্যাচার চালিয়েছিল তা স্বিকার করতে বাধ্য হয়। কিন্তু সেই রিপোর্ট গত ৬৫ বছর আলোর মুখ দেখেনি। কিন্তু সম্প্রতি কেমব্রিজ এর ইতিহাস গবেষক সুনীল পুরষোত্তম এই রিপোর্টটি উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছেন। সেই রিপোর্ট এ ভারতিয় পার্লামেন্ট সদস্য রাই স্বিকার করেছেন চল্লিশ হাজার এর মত সাধারন নিরিহ মানুষ ভারতিয় বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে এবং বিপল পরিমান সম্পদ লুট করা হয়েছে। হায়দারাবাদ এর সুত্রে এই হত করা মানুষের সংখ্যা লক্ষাধিক। এই রিপোর্টে আরো স্বিকার করা হয় যে ভারতিয় বাহিনী এবং তার সহায়তা উগ্র হিন্দু জনতা একাধিক মুসলিম জনসংখ্যা সম্বৃদ্ধ গ্রাম ধ্বংস করেছে। নিজেদের তদন্ত কারিদের উল্লেখ করা এই নিয়ন্ত্রিত সত্যও বিশ্বের সর্ববৃহত গনতন্ত্রের! দেশ ভারত প্রকাশ করেনি এত বছর। কারন এতে ফেটে যাবে তথাকথিত ধর্মনিরেপেক্ষ গনতান্ত্রিক ভারতের সাম্রাজ্যবাদি চরিত্র।

1 টি মন্তব্য: