সোমবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

সিরিয়াতে সম্ভাব্য মার্কিন হামলা কেমন হতে পারে

সিরিয়াতে সম্ভাব্য মার্কিন হামলা কেমন হতে পারে

লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৯:৪২:২০ সকাল
প্রধান সহযোগি বৃটেন এর পার্লামেন্ট এ অনুমোদন না পাওয়ায় বৃটেনকে পাশে না পেলেও সিরিয়াতে মার্কিন আক্রমন এখন প্রায় নির্ধারিত। এই হামলার উদ্দেশ্য কিন্তু এখনও পরিস্কার নয়। সিরিয়াতে মার্কিন হামলার অবজেকটিভ হতে পারে কয়েক রকম যেমন

১.আফগানিস্তানের মত মিসাইল ও বিমান আক্রমন এবং আসাদ বিরোধিদের তথ্য ও অস্ত্রদিয়ে সহায়তা করে সরকারি বাহিনীকে পরাজিত করা এবং বিরোধিদের ক্ষমতায় বসান। এই সম্ভাবনা খুব বেশি নয় কারন সিরিয়ায় আসাদ বিরোধিদের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভাল নয়। 

২.ইরাকের মত সর্বাত্মক যুদ্ধের মাধ্যমে আসাদ সরকারের উচ্ছেদ। এটির সম্ভাবনা ও বেশি নয় কারন সিরিয়াতে সর্বাত্মক আক্রমনে রাশিয়া ও চিন যথেষ্ট বাধা দেবে। আসাদ সরকারের প্রতি সমর্থন থাকুক আর না থাকুক এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক বাহিনীর আরো উপস্থিতিকে রাশিয়া সহজে মেনে নেবেনা।

৩.লিবিয়া বা সুদানে ইতিপুর্বে চালান আক্রমনের মত মিসাইল আক্রমন। বা পাকিস্তানের মত ড্রোন আক্রমন। এই ধরনের আক্রমনের সম্ভাবনাই বেশি।

বর্তমানে এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি আছে সিরিয়ার সম্পুর্ন পুর্ব সিমান্ত জুড়ে ইরাকে। সেখানে মার্কিন সেনা,মেরিন ও বিমানবাহিনির লক্ষাধিক সৈন্য রয়েছে সর্বাত্মক যুদ্ধে যারা সিরিয়ান বাহিনির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবে। দক্ষিনে জর্দানেও মার্কিন সামরিক উপস্থিতি আছে। সিরিয়ার উত্তরে তুরুস্কে ন্যাটোর অধিন মার্কিন সেনাবাহিনী রয়েছে তবে সিরিয়ার আসাদ সরকারের বিরোধি হলেও তুরুস্ক মার্কিন বাহিনীকে নিজের ভুখন্ড ব্যবহার করতে না ও দিতে পারে। সিরিয়ার পশ্চিমে ভুমধ্য সাগরে রয়েছে মার্কিন ষষ্ঠ নেীবহর বা সিক্সথ ফ্লিট যার সদর দপ্তর ইটালির নেপলস বন্দরে। এই নেীবহরে আছে প্রায় দুইশত বিমান সহ চল্লিশটির অধিক যুদ্ধ জাহাজ। এরমধ্যে রয়েছে বিমানবাহি জাহাজ, ল্যান্ডিং শিপ ডক, এবং সাবমেরিন। এই বহরের অধিনে এক ডিভিশন পরিমান মেরিনসেনা ও আছে। জার্মানি,ইটালি ও ফ্রান্স এর ঘাঁটিগুলি তে রয়েছে আরো জঙ্গি বিমান ও ইউএস সেনাবাহিনীর কয়েক ডিভিশন সৈন্য। ফ্রান্স মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্রকে পুর্ন সমর্থন দিলেও ফরাসি নেীবাহিনী সিরিয়া আক্রমনে উপযুক্ত নয়। 

বর্তমান পরিস্থিতিতে যা মনে হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়া আক্রমন সিরিয়ার মধ্যের স্ট্র্যাটেজিক টার্গেটগুলিতে বিমান ও মিসাইল হামলার মধ্যেই সিমাবদ্ধ থাকবে তবে সিরিয়ার ভুমধ্যসাগরিয় উপকুলে সল্প মাত্রার উভচর আক্রমন ও হতে পারে। বিশাল মার্কিন বাহিনীর মুকাবিলায় সিরিয়ার আছে তিন লক্ষ এর অধিক সেনাবাহিনী, ৩০০ এর বেশি জঙ্গি বিমান সজ্জিত বিমানবাহিনী, বেশ উন্নত মানের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং একটি উপকূলিয় নৈীবাহিনী। সিরিয়ান সেনাবাহিনী যান্ত্রিক ও ভারি কামান দ্বারা সুসজ্জিত হলেও বর্তমানে তা দেশের মানুষের সাথেই যুদ্ধে লিপ্ত এবং এই বাহিনীর মনোবল ভাল থাকার কথা নয়। বাহিনীতে সুন্নি মুসলিমদের প্রাধান্য রয়েছে যদিও আহলে বাইত ও শিয়াদের প্রাধান্য কমান্ডিং পজিশনগুলিতে বেশি। রাশিয়ান ও চাইনিজ অস্ত্র ও ট্যাংক সজ্জিত বাহিনী ইলেকট্রনিক্স ও অন্যান্য টেকনলজির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনেক পিছিয়ে থাকলেও সম্মুখ যুদ্ধে তা যুক্তরাষ্ট্রকে খুববেশি সুবিধা দেবেনা। সিরিয়ান বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনীও খুবই শক্তিশালি। পুরোন ও নতুন রাশিয়ান বিমান প্রতিরক্ষা মিসাইল সিষ্টেম এর সাথে অত্যাধুনিক চাইনিজ রাডার মার্কিন রাডার জ্যামিং টেকনলজিকেও পরাস্ত করতে সক্ষম হতে পারে। সিরিয়ান বিমান বাহিনী মুলত রাশিয়ান মিগ-২১,২৩,২৫,ও ২৯ বিমান দিয়ে সজ্জিত। অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক রাডার ও মিসাইল সজ্জিত মার্কিন বিমানের তুলনায় আক্রমন সক্ষমতা ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে থাকলেও সল্প পাল্লার প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে এই বিমানগুলি মার্কিন বিমানের সাথে সমানে সমানে লড়তে সক্ষম। সিরিয়ার প্রতিরক্ষার দুর্বলতম স্থান হচ্ছে তার নেীবাহিনী। নেীবাহিনীর সবচেয়ে বড় যুদ্ধ জাহাজ হচ্ছে রাশিয়ার তৈরি দুটি পেটওয়া শ্রেনীর ফ্রিগেট যা প্রায় পঞ্চাশ বছরের পুরোন মডেলে। অস্ত্র ও রাডার ব্যবস্থা উন্নত করা হলেও এগুলি অপারেশনাল রেঞ্জ বেশি নয়। এছাড়াও আছে উসা শ্রেনীর মিসাইল বোট। এই ধরনের মিসাইল বোট এখনও রাশিয়া, চিন,বাংলাদেশ সহ অনেক দেশ ব্যবহার করছে কিন্তু এমনকি বাংলাদেশ ও এই বোটগুলিতে ব্যবহার এর জন্য নতুন মিসাইল ও রাডার সিষ্টেম স্থাপন করেছে। কিন্তু সিরিয়ান যুদ্ধ জাহাজগুলি ততটা উন্নয়ন করা হয়নি। অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক মিসাইল ডিফেন্স এবং ক্লোজ ইন ওয়েপন সিষ্টেম যুক্ত মার্কিন যুদ্ধজাহাজের বিরুদ্ধে পুরোন টেকনলজির মিসাইল বেশি কার্যকর হবে বলে মনে হয়না। মার্কিন সাবমেরিন ও সিরিয়ার জন্য বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে যদিও সিরিয়ার উপকুল খুব বেশি গভির নয়। 

সর্বশেষ প্রাপ্ত সংবাদ অনুসারে সিরিয়াতে আক্রমনে সিরিয়াতে আক্রমনের উপযুক্ত দুরুত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাচটি "আরলি বার্ক" শ্রেনীর মিসাইল ডেষ্ট্রয়ার মোতায়েন করেছে। এই যুদ্ধ জাহাজগুলি অত্যাধুনিক এইজিস কমব্যাট সিষ্টেম সজ্জিত ৮০০০-৯০০০ টন ওজনের জাহাজ। এই জাহাজগুলি প্রতিটি নব্বইটি করে টমাহক ও হারপুন মিসাইল সহ বিভিন্ন ধরনের মিসাইল বহন করতে পারে। টমাহক মিসাইল যা ক্রুজ মিসাইল বলে পরিচিত তা ৪৫০ কেজি বিস্ফোরক সহ ১৫৫০ মাইল দুরের লক্ষে আঘাত হানতে পারে। অত্যাধুনিক জিপিএস ও স্যাটেলাইট গাইডেনস সজ্জিত এই মিসাইল এর টার্গেট ভেদ করার হার ৯৫% এর ও বেশি। এছাড়াও এই জাহাজ গুলিতে আছে পাঁচ ইঞ্চি বা ১২৭ মিলিমিটার কামান মিসাইল ও বিমান প্রতিরক্ষার ক্লোজ ইন ওয়েপন সিস্টেম ও টর্পেডো। এই জাহাজগুলি ছাড়াও এক ব্যাটালিয়ন এর মেরিন সেনাবাহি একটি উভচর আক্রমন জাহাজ ও মোতায়েন করা হয়েছে। এই ধরনের জাহাজ মোতায়েন থেকে এটাই মনে হচ্ছে যে সিরিয়াতে মার্কিন হামলা এখনই সর্বাত্মক হচ্ছেনা বা সিরিয়ার বিদ্রোহিদের বিশেষ সহায়তার উদ্দেশ্য ও তাদের নাই। তারা সিরিয়ার ষ্ট্র্যাটেজিক কিছু টার্গেট এ মিসাইল ও ড্রোন আক্রমন করতে চায় এবং সল্প মাত্রায় সিরিয় উপকূলেও আক্রমন চালাতে পারে। কিন্তু আসাদ সরকার উচ্ছেদ এর জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা তারা এখনই সম্ভবত নেবেনা। মার্কিন এই ষ্ট্র্যাটেজিক টার্গেটগুলি যে অবশ্যই ইসরাইল এর জন্য যেখানে সুবিধা সেখানে নির্ধারন করা হবে তা বলাই বাহুল্য। উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকায় এই আক্রমন আসাদ সরকারের বেশি ক্ষতি করবে বলে মনে হয়না। যদি পুর্ব দিকে ইরাক থেকে মার্কিন স্থল হামলা শুরু হয় তাহেলে তা মুকাবেলায় আসাদ সরকার বেশি অসুবিধায় পড়তে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে রাশিয়া তার ব্ল্যাক সি বা কৃষ্ন সাগরিয় নেীবহরের সাহাজ্যে হস্তক্ষেপ করতে পারে। যা অবস্থানগত কারনে ইরাক বা আফগানিস্থানে সম্ভব ছিলনা। 

সবকিছু মিলিয়ে এই যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য বা মুসলিম বিশ্বের জন্য কোন সুসংবাদ বয়ে আনবেনা। প্রকৃতপক্ষে সারা বিশ্বের মানুষদের জন্যও নয়। সিরিয়াতে এক রাসায়নিক আক্রমনে যতজন মানুষ মারা গেছে গত একমাসে মিসরে তার চেয়ে বেশি মানুষ সেনাবাহিনীর গুলিতে মৃত্যবরন করলেও মিসরের সরকারের ব্যাপার পশ্চিমা বিশ্ব নিরব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন