মিস্টি ধারাল মিছরির ছুরি মিসরী মেয়ের হাসি
হাঁসা পাথরের কুচিসম দাঁত,সব যেন আজ বাসি।
মিসরের স্বাধিনতা আন্দোলনের প্রধান নেতা সাদ জগলুল পাশার ইন্তেকালে জাতিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার অনুভুতিকে প্রকাশ করে ছিলেন এইভাবেই। আজকে একটু অন্যভাবে হলেও এই চরনদুটিই মনে পড়ছে। সেদিন জাতিয় কবি মিসরের দুঃখে এই চরনদুটি লিখেছিলেন। আজকে মিসরের আনন্দেই যেন মিসরী মেয়ের হাসি টা বাসি মনে হচ্ছে।
মিসরের ইতিহাস আর পৃথিবীর ইতিহাস যেন সমসাময়িক। পৃথিবীর প্রাচিনতম সভ্যতার নির্দশনগুলি পাওয়া গেছে মিসরেই। পৃথিবীর সকল ধর্ম গ্রন্থেই মিসরের নাম এসেছে বিভিন্ন প্রসঙ্গে। অসংখ্য নবী-রাসূল এর জন্ম ও কর্ম ক্ষেত্র মিসর। আবার ফেরাউনের মত খোদাদ্রোহিদের দেশও মিশর।
৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে আমর ইবনুল আস (রাঃ) এর নেতৃত্বে মাত্র চার হাজার মুজাহিদ বিশাল রোমক বাহিনীকে পরাজিত করে মিসরে ইসলামের দাওয়াত পেীছানোর পর থেকে এখনও পর্যন্ত মিসর মুসলিম সভ্যতার অন্যতম নির্দশন হিসেবে বিবেচিত। গাজী সালাউদ্দিন এর স্মৃতি বিজরিত মিসর থেকে জন্ম নিয়েছেন অসংখ মুসলিম বীর,আলেম,বিজ্ঞানী।
১৮০০ সালে মিসরের ক্ষমতায় আসেন আলবেনিয় বংশদ্ভুত মুহাম্মদ আলি। নামে মাত্র তুর্কি খলিফার আনুগত্য প্রকাশ করে স্বাধিন ভাবে মিসরে নতুন সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। তিনি একজন যোগ্য শাসক হলেও মুসলিম সভ্যতার পতনের সময় তার উত্তর আধিকারীরাও ছিলেন অযোগ্য। ১৮৮২ সাল থেকেই মিসর একরকম বৃটিশ ও ফরাসি দ্বৈত নিয়ন্ত্রনে চলে যায়। এর মধ্যে ১৮৬৯ সালে চালু হয় সুয়েজ খাল। যা এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে নেী দুরত্ব কমিয়ে দেয় অনেকখানি যা ইউরোপিয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলিকে তাদের এশিয়ার উপনিবেশগুলি থেকে সম্পদ লুট ও নিয়ন্ত্রন করা সহজ করে তোলে। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মিসর সরাসরি বৃটিশ নিয়ন্ত্রনে চলে যায়। তবে নামমাত্র সুলতানের পদ বজায় থাকে। যুদ্ধ শেষে মিসরের ষ্বাধিনতা আন্দোলন তিব্র হয়ে উঠে সাদ জগলুল পাশার নেতৃত্বে। এ অবস্থায় ১৯২২ সালে বৃটেন মিশরকে সল্প স্বাধিনতা দেয়। ১৯২৪ সালে সাদ জগুলল পাশা সল্প সময়ের জন্য প্রধান মন্ত্রি হলে মিসরের পুর্ন স্বাধিনতার চেষ্টা শুরু করলে তাকে পদচুত্য করা হয়। মিসর ১৯৫২ সাল পর্যন্ত বৃটিশ নিয়ন্ত্রনে সামান্য স্বাধিনতা বজায় রাখে। এর মধ্যে ১৯৩৯ সালে শুরু হয় দ্বিতিয় মহাযুদ্ধ। মিসর দ্বিতিয় মহাযুদ্ধের কয়েকটি ভয়ংকর যুদ্ধের ক্ষেত্র। যুদ্ধের প্রয়োজনে বৃটিম সরকার মিসরের একটি সশস্ত্র বাহিনী গঠন করতে বাধ্য হয়। কিন্তু এই সশন্ত্র বাহিনীর সদস্যরা অনেক্ই হয়ে উঠেন জাতিয়তাবোধে উদ্ভুদ্ধ। এর আগে ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইখওয়ান আল মুসলিমিন বা মুসলিম ব্রাদারহূড। ইসলামি আদর্শে জাতিয়তাবোধ ও স্বাধিনতার সংগ্রামে উদ্ভুদ্ধ তরুনরা হাসান আল বান্নার নেতৃত্বে সংগঠিত হয় ইখওয়ান আল মুসলিমিনে। এদিকে সেনাবাহিনীতে কর্মরত একদল অফিসার যারা নিজেদেরকে ফ্রি অফিসার্স নামে অভিহিত করতেন তারা মিসরের রাজতন্ত্র উচ্ছেদ এবং পুর্ন স্বাধিনতার জন্য সংগ্রামের প্রস্তুতি নেন। এই দলের ম্যেধ ছিল মিশ্র মানসিকতার মানুষ। কেউ কেউ ছিলেন ইসলামি আদর্শে উদ্ভদ্ধ কেউবা জাতিয়তাবাদি আধুনিক কেউ আবার স্রেফ সুযোগ সন্ধানি। ১৯৫৩ সালে ফ্রি অফিসার রা জেনারেল মুহাম্মদ নগিবের নেতৃত্বে মিসরের পুর্ন স্বাধিনতা ঘোষনা করে এবং মিসরের শেষ রাজা ফারুককে নির্বাসন দেয়। নগিব সাময়িকভাবে একটি সরকার গঠন করেন। ইখওয়ানুল মুসলিমিন সহ অন্যান্য স্বাধিনতাকামী রাজনৈতিক শক্তি সমর্থন দেয় তাকে। কিন্তু সুযোগ সন্ধানি জামাল আবদুল নাসের ১৯৫৪ সালে নগিব কে ক্ষমতাচুত্য ও গৃহবন্দি করেন। এর পর জামাল নাসের প্রতিষ্ঠা করেন স্বৈরতান্ত্রিক এক শাসন। ইখওয়ান আল মুসলিমিন সহ অন্যান্য বিরোধি রাজণৈতিক শক্তিকে উচ্ছেদ ও র্নিমূলে কঠোর ব্যবস্থা নেন। অন্যদিকে মিসর কে গড়ে তুলতে শুরু করেন পাশ্চাত্য স্টাইলে। তার শাসনামলে মিসর হয়ে উঠে প্রাচ্যের সভ্যতা থেকে পাশ্চাত্য অপসংস্কৃতির লিলাভুমি হিসেবে। জামাল নাসের অত্যাচারি এবং স্বৈর শাষক হলেও ছিলেন জাতিয়তাবাদী। ১৯৫৬সালে তিনি সুয়েজখাল জাতিয়করন করেন।১৯৫৬ ও ১৯৬৭ সালে দুটি যুদ্ধে ইসরাইল ও বৃটেন ও ফ্রান্সের সাথে যুদ্ধ করেন। ১৯৭০ সালে জামাল নাসের এর মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন তার দির্ঘদিনের সহযোগি আনওয়ার সাদাত। ১৯৭৩ সালে আবার ইসরাইল এর সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পরে মিসর। সিনাই উপদ্বিপ উদ্ধার করতে সমর্থ হওয়ায় তার জনপ্রিয়তাও কিছুটা বৃদ্ধি পায়। আনওয়ার সাদাত আভ্যন্তরিন বিষয়ে কিছূটা নমনিয় ভাব প্রদর্শন করেন। ইখওয়ানঅাল মুসলিমিনের বিরুদ্ধে চলতে থাকা অত্যাচার অনেকটা হ্রাস পায়। কিন্তু সাদাত ইসরাইল কে স্বিকৃতি দিলে এবং ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি সাক্ষরের কারনে আবার জনগনের বিরাগ ভাজন হন্। ১৯৮১ সালে সাদাত এর আকস্মিক মৃত্যু ভাগ্য খুলে দেয় হোসনি মুবারকএর। বিমানবাহিনীর অফিসার হোসনি মুবারক তার পথম জীবন পুরোটাই ছিলেন এক জন ক্যারিয়ার সামরিক ব্যাক্তি। রাজনৈতিক বিষয়ে বিশেষ মনযোগ তার ছিলনা। টেকনিক্যাল পার্সন হিসিবেই তিনি প্রথমে প্রতিরক্ষা মন্ত্রি নিয়োজিত হন এবং পরে সাদাত স্রেফ তার সহকারী হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ দেন তাকে। সাদাত এর আকস্মিক মৃত্যু তাকে মিসরের নতুন ফেরাউন হিসেবে আবির্ভাবের সুযোগ করে দেয়। ১৯৮১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত মিসরে জারি আছে জরুরি অবস্থা। জনগনের মেীলিক অধিকার রয়েছে স্থগিত। হুসনি মুবারক কয়েকবার নামমাত্র নির্বাচন দেন যে সকল নির্বাচনে তিনি ৯০ শতাংশ ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কিন্তু পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতি ও মিসরের অর্থনৈতিক অবষ্থা তার শাসন এর বিরুদ্ধে জনগনকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করে। হুসনি মুবারক কয়েকবার পার্লামেন্ট নির্বাচন দেন কিন্তু প্রবল বাধা এবং অত্যাচার সত্বেয় এই নির্বাচনগুলিতে তার বিরোধি দলগুলি বিশেষ করে ইখওয়ান আল মুসলিমিন অনেক আসন লাভ করে। তবে ১৯৫৪ সাল থেকেই ইখওয়ান আল মুসলিমিন রাজণৈতিক দল হিসেবে মিসরে নিষিদ্ধ। এর প্রর্থিরা সতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন। এদিকে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এক সময় সোভিয়েট ইউনিয়নের পরম বন্ধু হুসনি মুবারক মার্কিন ছাতার তলে আশ্রয় গ্রহন করে নিজের ক্ষমতা বজায় রাখার প্রয়াস পান। ইতঃমধ্যে মিসরের প্রতিবেশি তিউনিসিয়ার জনগন বিপ্লবরে মাধ্যমে উচ্ছেদ করে স্বৈরশাসক বেন আলি কে। ২০১১ সালের ২৫ শে জানুয়ারি এই সাফল্যে উদ্ভুদ্ধ মিসরিয় তরুন সমাজ নেমে আসে রাজপথে ষাট বছর ধরে চলতে থাকা স্বৈর শাসন উচ্ছেদ করে জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। জনগনের মানসিকতা দেখেই সম্ভবত হুসনি মুবারকের প্রধান খুটি সেনাবাহিনী এই বিপ্লব প্রতিরোধ করতে শক্তি প্রয়োগে সম্মত হয়নি। শেষ পর্যন্ত নানা টালবাহানা করে হুসনি মুবারক ও তার সরকার ১১ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করলেন সশস্ত্র বাহিনীর সুপ্রীম কমান্ড কাউন্সিল এর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। জনগন হুসনি মুবারককে হঠানর সাফল্যে আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়েছে মিসরের আনাচে কানাচে। আর পৃথিবীর সকল মুক্তিকামী মানুষও সেই আনন্দের অংশিদার হয়ে আজকে অভিনন্দন জানাচ্ছে মিসরের বিপ্লবি জনতা কে।
মিসরের ভবিষ্যত এখনও অস্পষ্ট। ক্ষমতা গ্রহনকারী সশস্ত্রবাহিনীর পরবর্তি পদক্ষেপ কি হবে তা এখনও অজানা। নতুন কোন স্বৈরশাসক আবার ক্ষমতায় চেপে বসবে না জনগনের সরকার কায়েম হবে সে প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতের গর্ভে। তবুও আজকের দিনটি অবশ্যই জনগনের বিজয়ের দিন। সশস্ত্র বাহিনী নিশ্চয় জনগনের মানসিকতা বুঝতে পারছে। নতুন কোন স্বৈরশাসক যদিওবা চেপে বসতে চেষ্টা করে তার মেয়াদ নাসের,সাদাত বা হুসনি মুবারক এর মত দির্ঘ ও কুসুমাস্তির্ন হবেনা সেটা নিশ্চিত। যে জনতা একবার জেগে উঠেছে তাকে ঘুম পাড়ান সহজ নয়।
হাঁসা পাথরের কুচিসম দাঁত,সব যেন আজ বাসি।
মিসরের স্বাধিনতা আন্দোলনের প্রধান নেতা সাদ জগলুল পাশার ইন্তেকালে জাতিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার অনুভুতিকে প্রকাশ করে ছিলেন এইভাবেই। আজকে একটু অন্যভাবে হলেও এই চরনদুটিই মনে পড়ছে। সেদিন জাতিয় কবি মিসরের দুঃখে এই চরনদুটি লিখেছিলেন। আজকে মিসরের আনন্দেই যেন মিসরী মেয়ের হাসি টা বাসি মনে হচ্ছে।
মিসরের ইতিহাস আর পৃথিবীর ইতিহাস যেন সমসাময়িক। পৃথিবীর প্রাচিনতম সভ্যতার নির্দশনগুলি পাওয়া গেছে মিসরেই। পৃথিবীর সকল ধর্ম গ্রন্থেই মিসরের নাম এসেছে বিভিন্ন প্রসঙ্গে। অসংখ্য নবী-রাসূল এর জন্ম ও কর্ম ক্ষেত্র মিসর। আবার ফেরাউনের মত খোদাদ্রোহিদের দেশও মিশর।
৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে আমর ইবনুল আস (রাঃ) এর নেতৃত্বে মাত্র চার হাজার মুজাহিদ বিশাল রোমক বাহিনীকে পরাজিত করে মিসরে ইসলামের দাওয়াত পেীছানোর পর থেকে এখনও পর্যন্ত মিসর মুসলিম সভ্যতার অন্যতম নির্দশন হিসেবে বিবেচিত। গাজী সালাউদ্দিন এর স্মৃতি বিজরিত মিসর থেকে জন্ম নিয়েছেন অসংখ মুসলিম বীর,আলেম,বিজ্ঞানী।
১৮০০ সালে মিসরের ক্ষমতায় আসেন আলবেনিয় বংশদ্ভুত মুহাম্মদ আলি। নামে মাত্র তুর্কি খলিফার আনুগত্য প্রকাশ করে স্বাধিন ভাবে মিসরে নতুন সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। তিনি একজন যোগ্য শাসক হলেও মুসলিম সভ্যতার পতনের সময় তার উত্তর আধিকারীরাও ছিলেন অযোগ্য। ১৮৮২ সাল থেকেই মিসর একরকম বৃটিশ ও ফরাসি দ্বৈত নিয়ন্ত্রনে চলে যায়। এর মধ্যে ১৮৬৯ সালে চালু হয় সুয়েজ খাল। যা এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে নেী দুরত্ব কমিয়ে দেয় অনেকখানি যা ইউরোপিয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলিকে তাদের এশিয়ার উপনিবেশগুলি থেকে সম্পদ লুট ও নিয়ন্ত্রন করা সহজ করে তোলে। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মিসর সরাসরি বৃটিশ নিয়ন্ত্রনে চলে যায়। তবে নামমাত্র সুলতানের পদ বজায় থাকে। যুদ্ধ শেষে মিসরের ষ্বাধিনতা আন্দোলন তিব্র হয়ে উঠে সাদ জগলুল পাশার নেতৃত্বে। এ অবস্থায় ১৯২২ সালে বৃটেন মিশরকে সল্প স্বাধিনতা দেয়। ১৯২৪ সালে সাদ জগুলল পাশা সল্প সময়ের জন্য প্রধান মন্ত্রি হলে মিসরের পুর্ন স্বাধিনতার চেষ্টা শুরু করলে তাকে পদচুত্য করা হয়। মিসর ১৯৫২ সাল পর্যন্ত বৃটিশ নিয়ন্ত্রনে সামান্য স্বাধিনতা বজায় রাখে। এর মধ্যে ১৯৩৯ সালে শুরু হয় দ্বিতিয় মহাযুদ্ধ। মিসর দ্বিতিয় মহাযুদ্ধের কয়েকটি ভয়ংকর যুদ্ধের ক্ষেত্র। যুদ্ধের প্রয়োজনে বৃটিম সরকার মিসরের একটি সশস্ত্র বাহিনী গঠন করতে বাধ্য হয়। কিন্তু এই সশন্ত্র বাহিনীর সদস্যরা অনেক্ই হয়ে উঠেন জাতিয়তাবোধে উদ্ভুদ্ধ। এর আগে ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইখওয়ান আল মুসলিমিন বা মুসলিম ব্রাদারহূড। ইসলামি আদর্শে জাতিয়তাবোধ ও স্বাধিনতার সংগ্রামে উদ্ভুদ্ধ তরুনরা হাসান আল বান্নার নেতৃত্বে সংগঠিত হয় ইখওয়ান আল মুসলিমিনে। এদিকে সেনাবাহিনীতে কর্মরত একদল অফিসার যারা নিজেদেরকে ফ্রি অফিসার্স নামে অভিহিত করতেন তারা মিসরের রাজতন্ত্র উচ্ছেদ এবং পুর্ন স্বাধিনতার জন্য সংগ্রামের প্রস্তুতি নেন। এই দলের ম্যেধ ছিল মিশ্র মানসিকতার মানুষ। কেউ কেউ ছিলেন ইসলামি আদর্শে উদ্ভদ্ধ কেউবা জাতিয়তাবাদি আধুনিক কেউ আবার স্রেফ সুযোগ সন্ধানি। ১৯৫৩ সালে ফ্রি অফিসার রা জেনারেল মুহাম্মদ নগিবের নেতৃত্বে মিসরের পুর্ন স্বাধিনতা ঘোষনা করে এবং মিসরের শেষ রাজা ফারুককে নির্বাসন দেয়। নগিব সাময়িকভাবে একটি সরকার গঠন করেন। ইখওয়ানুল মুসলিমিন সহ অন্যান্য স্বাধিনতাকামী রাজনৈতিক শক্তি সমর্থন দেয় তাকে। কিন্তু সুযোগ সন্ধানি জামাল আবদুল নাসের ১৯৫৪ সালে নগিব কে ক্ষমতাচুত্য ও গৃহবন্দি করেন। এর পর জামাল নাসের প্রতিষ্ঠা করেন স্বৈরতান্ত্রিক এক শাসন। ইখওয়ান আল মুসলিমিন সহ অন্যান্য বিরোধি রাজণৈতিক শক্তিকে উচ্ছেদ ও র্নিমূলে কঠোর ব্যবস্থা নেন। অন্যদিকে মিসর কে গড়ে তুলতে শুরু করেন পাশ্চাত্য স্টাইলে। তার শাসনামলে মিসর হয়ে উঠে প্রাচ্যের সভ্যতা থেকে পাশ্চাত্য অপসংস্কৃতির লিলাভুমি হিসেবে। জামাল নাসের অত্যাচারি এবং স্বৈর শাষক হলেও ছিলেন জাতিয়তাবাদী। ১৯৫৬সালে তিনি সুয়েজখাল জাতিয়করন করেন।১৯৫৬ ও ১৯৬৭ সালে দুটি যুদ্ধে ইসরাইল ও বৃটেন ও ফ্রান্সের সাথে যুদ্ধ করেন। ১৯৭০ সালে জামাল নাসের এর মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন তার দির্ঘদিনের সহযোগি আনওয়ার সাদাত। ১৯৭৩ সালে আবার ইসরাইল এর সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পরে মিসর। সিনাই উপদ্বিপ উদ্ধার করতে সমর্থ হওয়ায় তার জনপ্রিয়তাও কিছুটা বৃদ্ধি পায়। আনওয়ার সাদাত আভ্যন্তরিন বিষয়ে কিছূটা নমনিয় ভাব প্রদর্শন করেন। ইখওয়ানঅাল মুসলিমিনের বিরুদ্ধে চলতে থাকা অত্যাচার অনেকটা হ্রাস পায়। কিন্তু সাদাত ইসরাইল কে স্বিকৃতি দিলে এবং ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি সাক্ষরের কারনে আবার জনগনের বিরাগ ভাজন হন্। ১৯৮১ সালে সাদাত এর আকস্মিক মৃত্যু ভাগ্য খুলে দেয় হোসনি মুবারকএর। বিমানবাহিনীর অফিসার হোসনি মুবারক তার পথম জীবন পুরোটাই ছিলেন এক জন ক্যারিয়ার সামরিক ব্যাক্তি। রাজনৈতিক বিষয়ে বিশেষ মনযোগ তার ছিলনা। টেকনিক্যাল পার্সন হিসিবেই তিনি প্রথমে প্রতিরক্ষা মন্ত্রি নিয়োজিত হন এবং পরে সাদাত স্রেফ তার সহকারী হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ দেন তাকে। সাদাত এর আকস্মিক মৃত্যু তাকে মিসরের নতুন ফেরাউন হিসেবে আবির্ভাবের সুযোগ করে দেয়। ১৯৮১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত মিসরে জারি আছে জরুরি অবস্থা। জনগনের মেীলিক অধিকার রয়েছে স্থগিত। হুসনি মুবারক কয়েকবার নামমাত্র নির্বাচন দেন যে সকল নির্বাচনে তিনি ৯০ শতাংশ ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কিন্তু পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতি ও মিসরের অর্থনৈতিক অবষ্থা তার শাসন এর বিরুদ্ধে জনগনকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করে। হুসনি মুবারক কয়েকবার পার্লামেন্ট নির্বাচন দেন কিন্তু প্রবল বাধা এবং অত্যাচার সত্বেয় এই নির্বাচনগুলিতে তার বিরোধি দলগুলি বিশেষ করে ইখওয়ান আল মুসলিমিন অনেক আসন লাভ করে। তবে ১৯৫৪ সাল থেকেই ইখওয়ান আল মুসলিমিন রাজণৈতিক দল হিসেবে মিসরে নিষিদ্ধ। এর প্রর্থিরা সতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন। এদিকে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এক সময় সোভিয়েট ইউনিয়নের পরম বন্ধু হুসনি মুবারক মার্কিন ছাতার তলে আশ্রয় গ্রহন করে নিজের ক্ষমতা বজায় রাখার প্রয়াস পান। ইতঃমধ্যে মিসরের প্রতিবেশি তিউনিসিয়ার জনগন বিপ্লবরে মাধ্যমে উচ্ছেদ করে স্বৈরশাসক বেন আলি কে। ২০১১ সালের ২৫ শে জানুয়ারি এই সাফল্যে উদ্ভুদ্ধ মিসরিয় তরুন সমাজ নেমে আসে রাজপথে ষাট বছর ধরে চলতে থাকা স্বৈর শাসন উচ্ছেদ করে জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। জনগনের মানসিকতা দেখেই সম্ভবত হুসনি মুবারকের প্রধান খুটি সেনাবাহিনী এই বিপ্লব প্রতিরোধ করতে শক্তি প্রয়োগে সম্মত হয়নি। শেষ পর্যন্ত নানা টালবাহানা করে হুসনি মুবারক ও তার সরকার ১১ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করলেন সশস্ত্র বাহিনীর সুপ্রীম কমান্ড কাউন্সিল এর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। জনগন হুসনি মুবারককে হঠানর সাফল্যে আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়েছে মিসরের আনাচে কানাচে। আর পৃথিবীর সকল মুক্তিকামী মানুষও সেই আনন্দের অংশিদার হয়ে আজকে অভিনন্দন জানাচ্ছে মিসরের বিপ্লবি জনতা কে।
মিসরের ভবিষ্যত এখনও অস্পষ্ট। ক্ষমতা গ্রহনকারী সশস্ত্রবাহিনীর পরবর্তি পদক্ষেপ কি হবে তা এখনও অজানা। নতুন কোন স্বৈরশাসক আবার ক্ষমতায় চেপে বসবে না জনগনের সরকার কায়েম হবে সে প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতের গর্ভে। তবুও আজকের দিনটি অবশ্যই জনগনের বিজয়ের দিন। সশস্ত্র বাহিনী নিশ্চয় জনগনের মানসিকতা বুঝতে পারছে। নতুন কোন স্বৈরশাসক যদিওবা চেপে বসতে চেষ্টা করে তার মেয়াদ নাসের,সাদাত বা হুসনি মুবারক এর মত দির্ঘ ও কুসুমাস্তির্ন হবেনা সেটা নিশ্চিত। যে জনতা একবার জেগে উঠেছে তাকে ঘুম পাড়ান সহজ নয়।
খুব ভালো লাগলো
উত্তরমুছুন