গতকাল ১১ ই নভেম্বর ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মেজর আবদুল গনির মৃত্যু বার্ষিকি। বাংলাদেশের স্বাধিনতার পিছনে যেই রেজিমেন্ট এর সৈনিক দের অবদান সর্বাধিক। কিন্তু বাংলাদেশের পত্রিকাগুলির মত ব্লগেও তাকে স্মরন করার অভাব দেখে সত্যিই অবাক হয়েছি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত তার ছোট জীবনিটি অবলম্বনে এই লেখাটি লিখছি।
মেজর আবদুল গনি ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১লা ডিসেম্বর কুমিল্লার বুড়িচং এর নাগাইস গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা শরাফত আলি ছিলেন একজন মধ্যবিত্ত কৃষক। সে সময়ে তিনি এন্ট্রান্স বর্তমান এস,এস,সি সমমানের শিক্ষা লাভ করেছিলেন যা তখনকার মুসলিমদের মধ্যে দুর্লভ ছিল সেই সঙ্গে এন্ট্রান্স পাস করেও কোন চাকরি গ্রহন না করে স্বাধিন ভাবে নিজের জমিজমার দেখাশোনা করে জীবিকা নির্বাহ করাও ছিল অভিনব। মেজর আবদুল গনি আড়াই বছর বয়সেই মা জোবেদা খাতুনকে হারান। আবদুল গনি প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু হয় মাদ্রাসায়। প্রাথমিক মাদ্রাসা শিক্ষা শেষে তিনি চট্টগ্রাম হাই মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এ সময় তিনি চট্টগ্রামে কর্মরত মুসলিম ম্যাজিস্ট্রেট হামিদ হাসান নোমানির দৃষ্টি আকর্ষন করেন। নোমানি সাহেব তাকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন এবং চট্টগ্রাম মুসলিম হাই স্কুলে ভর্তি করে দেন। স্কুলে নিচের ক্লাশে ভর্তি হতে বাধ্য হওয়ার কারনে কয়েক বছর পিছিয়ে পড়লেও নোমানি সাহেবের সহায়তায় তিনি ১৯৩৬ সালে খুলনা জেলা স্কুল থেকে মেট্রিক পরীক্ষায় উত্তির্ন হন। এর পর কলকতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং আই,এ পাস করেন। এরপর একই কলেজে বি,এ তে ভর্তি হন। পরীক্ষার ফলাফল দেয়ার আগেই তিনি কলকাতা ফায়ার ব্রিগেডে অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ছিলেন ফায়ার ব্রিগেডের প্রথম মুসলিম অফিসার। দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তৎকালিন বৃটিশ সেনাবাহিনীতে ভারতিয় ও বিশেষ করে বাঙ্গালিদের যোগদান সহজ করা হয়। এই সময় তিনি সেনাবাহিনীতে যোগদেন এবং কিংস কমিশন অফিসার হিসেবে মনোনিত হন। তিনি প্রথমে ইন্ডিয়ান পাইওনিয়ার কোরে নিযুক্ত হন। পাইওনিয়ার কোর মুলত যুদ্ধের সময় সাময়িকভাবে রিক্রট করা সৈনিকদের নিয়ে গঠিত হয়। এরা সাধারনত সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহন করেনা। কিন্তু তৎকালিন ক্যাপ্টেন আবদুল গনিকে বার্মা ও আরাকানে সম্মুক যুদ্ধের জন্য প্রেরন করা হয় তার কোম্পানি সহ। যুদ্ধ শেষে ক্যাপ্টেন গনি তার মায়ের চাচাত ভাই মাওলানা আবদুল গফুরের কন্যা আসিয়া বেগম কে বিয়ে করেন। যুদ্ধের পর ভারতিয় পাইওনিয়ার কোরের অধিকাংশ ইউনিট ভেঙ্গে দেয়া হলেও বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করায় মেজর আবদুল গনির কোম্পানি সহ বাঙ্গালি মুসলিমদের নিয়ে গঠিত দুটি কোম্পানী (কোম্পানী নং ১২৫৬ ও ১৪০৭) কে নিয়মিত সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মেজর গনি ১৯৪৭ সালে তৎকালিন স্বাধিন রাজ্য হায়দারাবাদের ঝালনায় পাইওনিয়ার কোর সেন্টার এ কর্মরত ছিলেন। উপমহাদেশের বিভক্তি নিশ্চিত হলে তিনি পাকিস্তানের পক্ষে অপশন দেন এবং ১৯৪৭ সালের আগষ্ট মাসে হায়দারাবাদ থেকে ৭০০ মুসলিম সৈনিক সহ ঢাকায় আগমন করেন। ঢাকায় এসেই ক্যাপ্টেন আবদুল গনি বাঙ্গালি মুসলিমদের নিয়ে একটি সতন্ত্র রেজিমেন্ট গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা শুরু করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি তৎকালিন পাকিস্তান সেনাবাহিনি প্রধান জেনারেল স্যার ফ্রান্ক মেজারভির কাছে পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। তার এই তৎপরতা উচ্চ পদস্থ অনেকেরই পছন্দ হয়নি। তাকে সেনাবাহিনীর বাইরে ন্যাশনাল গার্ডে ডেপুটেশনে পোস্টিং দেয়া হয়। কিন্তু তৎকালিন প্রধানমন্ত্রি খাজা নাজিমুদ্দিনের হস্তক্ষেপে তাকে শেষ পর্যন্ত রিক্রুটিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। এই পদে থেকে তিনি দ্রুততার সাথে একটি ব্যাটালিয়ন তৈরির জন্য প্রয়োজনিয় জনশক্তি রিক্রুট করে ফেলেন। অবশেষে ১৯৪৮ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে লেঃকর্নেল ভি,জে,ই প্যাটারসন কে কমান্ডিং অফিসার করে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে তৎকালিন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল ও অবিসংবাদি নেতা মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ উপস্থিত ছিলেন এবং গার্ড অফ অনারে সালাম গ্রহন করেন। মেজর আবদুল ওয়াহিদ চেীধুরি ট্রেনিং কোম্পনির অধিনায়ক নিযুক্ত হন এবং আরো একটি ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু হয়। ক্যাপ্টেন আবদুল গনি রিক্রুটিং অফিসার হিসেবে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জন্য সৈন্য সংগ্রহ করতে থাকেন। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর দ্রুত প্রসার অনেকেরই পছন্দ হয়নি। ক্যাপ্টেন গনিকে আবারও পাকিস্তান ন্যাশনাল গার্ডে নিযুক্ত করা হয়। পরে তাকে পাঞ্জাব রেজিমেন্ট এ পোস্টিং দেয়া হয়। ১৯৫৩ সালে তিনি সময়মত প্রমোশন ও যোগ্যতা অনুযায়ি পোস্টিং না দেওয়ার প্রতিবাদে অবসর গ্রহন করেন। অবসরের পূর্বে তাকে মেজর পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। অবসর গ্রহনের পর মেজর গনি জীবন ধারনের জন্য ব্যবসা শুরু করেন পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডেও জড়িত হয়ে পরেন। ১৯৫৪ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে যুক্ত ফ্রন্ট ও আওয়ামি লিগ থেকে মনোনয়ন পেলেও তিনি তা প্রত্যাখান করেন। একই সাথে মুসলিম লিগের কাজ দেখে তার প্রতিও বিতঃশ্রদ্ধ হয়ে তিনি সতন্ত্র প্রার্থি হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন এবং যুক্তফ্রন্ট ও মুসলিম লিগ উভয়ের প্রার্থিকে পরাজিত করে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি মুসলিম লিগের বিকল্প হিসেবে ইসলামি আদর্শ ভিত্তিক একটি দল প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা চালাতে থাকেন। ১৯৫৭ সালে তিনি দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্তন সৈনিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদানের জন্য তৎকালিন পশ্চিম জার্মানির রাজধানি বন নগরীতে গমন করেন। সম্মেলন শেষে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি ১৯৫৭ সালের এগারই নভেম্বর ইন্তেকাল করেন। তার মৃতদেহ দেশে ফেরত আনা হয় এবং কুমিল্লা সেনানিবাসে কবর দেয়া হয়। ব্যাক্তিগত জীবনে মেজর গনি ছিলেন একজন অত্যন্ত ধর্মপরায়ন ব্যাক্তি। এমনকি সেনাবাহিনিতে কর্মরত থাকা অবস্থায়ও তিনি ধর্মপরায়ন ছিলেন। সেনাবাহিনির তৎকালিন সংস্কৃতিতে মদ্যপান প্রচলিত থাকলেও তিনি কোনদিন মদ পান করেননি। সেনাবাহিনিতে প্রচলিত পার্টিতে তার স্ত্রীকে কখনই নিয়ে জাননি। তার স্ত্রীও ছিলেন একজন ধার্মিক মহিলা। মেজর গনি খেলাধুলা পছন্দ করতেন এবং একজন দানশীল ব্যাক্তি হিসেবে তার এলাকায় খ্যাত ছিলেন। মেজর গনি তিন কন্যা ও দুই পুত্রের জনক ছিলেন। তার উভয় পুত্রই বাংলাদেশ সেনাবাহিনিতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর প্রতিষ্ঠায় মেজর আবদুল গনির অবদান সর্বাধিক। এই ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টই ১৯৭১ সালের মুক্তযুদ্ধ ও বর্তমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনির নিউক্লিয়াস্। তথাপি মেজর আবদুল গনির মত ব্যাক্তিকে স্মরনকরতে আমাদের অনেক মিডিয়ার দৈন্যতা ব্যথিত করছে আমাকে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত তার ছোট জীবনিটি অবলম্বনে এই লেখাটি লিখছি।
মেজর আবদুল গনি ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১লা ডিসেম্বর কুমিল্লার বুড়িচং এর নাগাইস গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা শরাফত আলি ছিলেন একজন মধ্যবিত্ত কৃষক। সে সময়ে তিনি এন্ট্রান্স বর্তমান এস,এস,সি সমমানের শিক্ষা লাভ করেছিলেন যা তখনকার মুসলিমদের মধ্যে দুর্লভ ছিল সেই সঙ্গে এন্ট্রান্স পাস করেও কোন চাকরি গ্রহন না করে স্বাধিন ভাবে নিজের জমিজমার দেখাশোনা করে জীবিকা নির্বাহ করাও ছিল অভিনব। মেজর আবদুল গনি আড়াই বছর বয়সেই মা জোবেদা খাতুনকে হারান। আবদুল গনি প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু হয় মাদ্রাসায়। প্রাথমিক মাদ্রাসা শিক্ষা শেষে তিনি চট্টগ্রাম হাই মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এ সময় তিনি চট্টগ্রামে কর্মরত মুসলিম ম্যাজিস্ট্রেট হামিদ হাসান নোমানির দৃষ্টি আকর্ষন করেন। নোমানি সাহেব তাকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন এবং চট্টগ্রাম মুসলিম হাই স্কুলে ভর্তি করে দেন। স্কুলে নিচের ক্লাশে ভর্তি হতে বাধ্য হওয়ার কারনে কয়েক বছর পিছিয়ে পড়লেও নোমানি সাহেবের সহায়তায় তিনি ১৯৩৬ সালে খুলনা জেলা স্কুল থেকে মেট্রিক পরীক্ষায় উত্তির্ন হন। এর পর কলকতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং আই,এ পাস করেন। এরপর একই কলেজে বি,এ তে ভর্তি হন। পরীক্ষার ফলাফল দেয়ার আগেই তিনি কলকাতা ফায়ার ব্রিগেডে অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ছিলেন ফায়ার ব্রিগেডের প্রথম মুসলিম অফিসার। দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তৎকালিন বৃটিশ সেনাবাহিনীতে ভারতিয় ও বিশেষ করে বাঙ্গালিদের যোগদান সহজ করা হয়। এই সময় তিনি সেনাবাহিনীতে যোগদেন এবং কিংস কমিশন অফিসার হিসেবে মনোনিত হন। তিনি প্রথমে ইন্ডিয়ান পাইওনিয়ার কোরে নিযুক্ত হন। পাইওনিয়ার কোর মুলত যুদ্ধের সময় সাময়িকভাবে রিক্রট করা সৈনিকদের নিয়ে গঠিত হয়। এরা সাধারনত সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহন করেনা। কিন্তু তৎকালিন ক্যাপ্টেন আবদুল গনিকে বার্মা ও আরাকানে সম্মুক যুদ্ধের জন্য প্রেরন করা হয় তার কোম্পানি সহ। যুদ্ধ শেষে ক্যাপ্টেন গনি তার মায়ের চাচাত ভাই মাওলানা আবদুল গফুরের কন্যা আসিয়া বেগম কে বিয়ে করেন। যুদ্ধের পর ভারতিয় পাইওনিয়ার কোরের অধিকাংশ ইউনিট ভেঙ্গে দেয়া হলেও বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করায় মেজর আবদুল গনির কোম্পানি সহ বাঙ্গালি মুসলিমদের নিয়ে গঠিত দুটি কোম্পানী (কোম্পানী নং ১২৫৬ ও ১৪০৭) কে নিয়মিত সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মেজর গনি ১৯৪৭ সালে তৎকালিন স্বাধিন রাজ্য হায়দারাবাদের ঝালনায় পাইওনিয়ার কোর সেন্টার এ কর্মরত ছিলেন। উপমহাদেশের বিভক্তি নিশ্চিত হলে তিনি পাকিস্তানের পক্ষে অপশন দেন এবং ১৯৪৭ সালের আগষ্ট মাসে হায়দারাবাদ থেকে ৭০০ মুসলিম সৈনিক সহ ঢাকায় আগমন করেন। ঢাকায় এসেই ক্যাপ্টেন আবদুল গনি বাঙ্গালি মুসলিমদের নিয়ে একটি সতন্ত্র রেজিমেন্ট গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা শুরু করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি তৎকালিন পাকিস্তান সেনাবাহিনি প্রধান জেনারেল স্যার ফ্রান্ক মেজারভির কাছে পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। তার এই তৎপরতা উচ্চ পদস্থ অনেকেরই পছন্দ হয়নি। তাকে সেনাবাহিনীর বাইরে ন্যাশনাল গার্ডে ডেপুটেশনে পোস্টিং দেয়া হয়। কিন্তু তৎকালিন প্রধানমন্ত্রি খাজা নাজিমুদ্দিনের হস্তক্ষেপে তাকে শেষ পর্যন্ত রিক্রুটিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। এই পদে থেকে তিনি দ্রুততার সাথে একটি ব্যাটালিয়ন তৈরির জন্য প্রয়োজনিয় জনশক্তি রিক্রুট করে ফেলেন। অবশেষে ১৯৪৮ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে লেঃকর্নেল ভি,জে,ই প্যাটারসন কে কমান্ডিং অফিসার করে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে তৎকালিন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল ও অবিসংবাদি নেতা মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ উপস্থিত ছিলেন এবং গার্ড অফ অনারে সালাম গ্রহন করেন। মেজর আবদুল ওয়াহিদ চেীধুরি ট্রেনিং কোম্পনির অধিনায়ক নিযুক্ত হন এবং আরো একটি ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু হয়। ক্যাপ্টেন আবদুল গনি রিক্রুটিং অফিসার হিসেবে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জন্য সৈন্য সংগ্রহ করতে থাকেন। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর দ্রুত প্রসার অনেকেরই পছন্দ হয়নি। ক্যাপ্টেন গনিকে আবারও পাকিস্তান ন্যাশনাল গার্ডে নিযুক্ত করা হয়। পরে তাকে পাঞ্জাব রেজিমেন্ট এ পোস্টিং দেয়া হয়। ১৯৫৩ সালে তিনি সময়মত প্রমোশন ও যোগ্যতা অনুযায়ি পোস্টিং না দেওয়ার প্রতিবাদে অবসর গ্রহন করেন। অবসরের পূর্বে তাকে মেজর পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। অবসর গ্রহনের পর মেজর গনি জীবন ধারনের জন্য ব্যবসা শুরু করেন পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডেও জড়িত হয়ে পরেন। ১৯৫৪ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে যুক্ত ফ্রন্ট ও আওয়ামি লিগ থেকে মনোনয়ন পেলেও তিনি তা প্রত্যাখান করেন। একই সাথে মুসলিম লিগের কাজ দেখে তার প্রতিও বিতঃশ্রদ্ধ হয়ে তিনি সতন্ত্র প্রার্থি হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন এবং যুক্তফ্রন্ট ও মুসলিম লিগ উভয়ের প্রার্থিকে পরাজিত করে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি মুসলিম লিগের বিকল্প হিসেবে ইসলামি আদর্শ ভিত্তিক একটি দল প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা চালাতে থাকেন। ১৯৫৭ সালে তিনি দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্তন সৈনিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদানের জন্য তৎকালিন পশ্চিম জার্মানির রাজধানি বন নগরীতে গমন করেন। সম্মেলন শেষে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি ১৯৫৭ সালের এগারই নভেম্বর ইন্তেকাল করেন। তার মৃতদেহ দেশে ফেরত আনা হয় এবং কুমিল্লা সেনানিবাসে কবর দেয়া হয়। ব্যাক্তিগত জীবনে মেজর গনি ছিলেন একজন অত্যন্ত ধর্মপরায়ন ব্যাক্তি। এমনকি সেনাবাহিনিতে কর্মরত থাকা অবস্থায়ও তিনি ধর্মপরায়ন ছিলেন। সেনাবাহিনির তৎকালিন সংস্কৃতিতে মদ্যপান প্রচলিত থাকলেও তিনি কোনদিন মদ পান করেননি। সেনাবাহিনিতে প্রচলিত পার্টিতে তার স্ত্রীকে কখনই নিয়ে জাননি। তার স্ত্রীও ছিলেন একজন ধার্মিক মহিলা। মেজর গনি খেলাধুলা পছন্দ করতেন এবং একজন দানশীল ব্যাক্তি হিসেবে তার এলাকায় খ্যাত ছিলেন। মেজর গনি তিন কন্যা ও দুই পুত্রের জনক ছিলেন। তার উভয় পুত্রই বাংলাদেশ সেনাবাহিনিতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর প্রতিষ্ঠায় মেজর আবদুল গনির অবদান সর্বাধিক। এই ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টই ১৯৭১ সালের মুক্তযুদ্ধ ও বর্তমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনির নিউক্লিয়াস্। তথাপি মেজর আবদুল গনির মত ব্যাক্তিকে স্মরনকরতে আমাদের অনেক মিডিয়ার দৈন্যতা ব্যথিত করছে আমাকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন